Pages

Tuesday, September 17, 2013

তাহাজ্জুতের নামাজ- আবশ্যিক থেকে ঐচ্ছিক।

তাহাজ্জুতের নামাজ- আবশ্যিক থেকে ঐচ্ছিক। 

 

তাহাজ্জুদ (Tahajjud) রাতের নামাজ (Salatul Layl)। অন্যান্য (ফজর, যোহর, আছর, মাগরিব ও এশা) নামাজের মত এ নামাজের কোন রা'কা সুনির্দিষ্ট নেই, নেই কোন সর্বোচ্চ লিমিট। It would be fulfilled even if one prayed just one rak`ah of  after `Isha'; however, it is traditionally prayed with at least two rak'at which is known as shif'a followed by witr as this is what Muhammad did. 

তবে এ বিষয়ে বুখারীর এই হাদিসটি অনুসরণ করা যেতে পারে- "Salatul Layl is offered as two rak'at followed by two rak'at and (so on) and if anyone is afraid of the approaching dawn (Fajr prayer) he should pray one rak'at and this will be a Witr for all the rak'at which he has prayed before." - বুখারী, ৫৩৯।

যাইহোক, তাহাজ্জুদ এশার নামাজের পর- রাতের প্রথম ভাগে, মধ্যভাগে বা শেষ রাতে পড়া হয়। এ নামাজ এখন আর ফরজ বা আবশ্যিক নয়।

কোরআন অবতরণের প্রথম দিকে এই আয়াত দ্বারা তাহাজ্জুতের নামাজ ফরজ করা হয়েছিল- "হে বস্ত্রাবৃত, রাত্রিতে দন্ডায়মান হও কিছু অংশ বাদ দিয়ে; অর্ধরাত্রি অথবা তদপেক্ষা কিছূ কম অথবা তদপেক্ষা বেশী এবং কোরআন আবৃত্তি কর সুবিন্যস্তভাবে ও স্পষ্টভাবে। আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি গুরুত্বপূর্ণ বাণী। নিশ্চয় এবাদতের জন্যে রাত্রিতে উঠা প্রবৃত্তি দলনে সহায়ক এবং স্পষ্ট উচ্চারণের অনুকূল। নিশ্চয় দিবাভাগে রয়েছে তোমার দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা। তুমি তোমার পালনকর্তার নাম স্মরণ কর এবং একাগ্রচিত্তে তাতে মগ্ন হও।" -(৭৫:১-৮)

উপরের আয়াতসমূহে দেখা যাচ্ছে তাহাজ্জুত রাত্রির অধিকাংশ সময় ধরে পড়ার নির্দেশ রয়েছে। মুহম্মদ (Muhammad) ও তার শিষ্যদের সকলেই তা পালন করতে লাগলেন। ফলে অতি অল্পসয়য়েই তাদের পদযুগল ফুলে গেল। তাছাড়া তখনকার যুগে ঘড়ির প্রচলন না থাকায় কতটা সময় ধরে নামাজ আদায় করা হয়েছে এ সম্পর্কে তাদের সম্যক ধারণা থাকত না। ফলে প্রায় সারা রাত্রিই তারা নামাজে অতিবাহিত করে ফেলতেন। তাদের এই কষ্ট ও শ্রম আল্লাহর অগোচরে ছিল না। কিন্তু তাঁর জ্ঞানে পূর্ব থেকেই নির্ধারিত ছিল যে, এই পরিশ্রম ও মেহনতী এবাদত ক্ষণস্থায়ী হবে, আর যাতে এর কারণে তারা পরিশ্রম ও মেহনতে অভ্যস্ত হয়ে যান। 

রাতের এই পরিশ্রম দেখে পৌত্তলিক কুরাইশগণ মুসলমানদেরকে বিদ্রুপ করতে লাগল। তারা বলল- ‘তোমাদের প্রতি কোরআন তো নয়, সাক্ষাৎ বিপদ নাযিল হয়েছে। দিনেও শান্তি নেই, রাতেও আরাম নেই।’
আর দারুণ নাদওয়ার সদস্য এবং একজন বিশিষ্ট কুরাইশ ব্যবসায়ী নাজার ইবনে হারেছ (Nazar ibn Harith ) অদ্ভূত এক কাজ করে বসলেন। তিনি পারস্য থেকে এক সুন্দরী বাঁদী ক্রয় করে এনে তাকে কোরআন শ্রবণ এবং ইসলাম থেকে মানুষকে ফেরানোর কাজে নিয়োগ করলেন। তিনি লোকদেরকে ডেকে ডেকে বলতে লাগলেন, ‘মুহম্মদ তোমাদেরকে কোরআন শুনিয়ে নামাজ কায়েম করতে, রোজা রাখতে এবং ধর্মের জন্যে প্রাণ বিসর্জনের কথা বলেন। এতে কষ্টই কষ্ট। এস, এই সুন্দরী নারীর কন্ঠে গান শুন ও উল্লাস কর।’
তখন এই আয়াত নাযিল হল- "তোমাকে ক্লেশ দেবার জন্যে আমি কোরআন নাযিল করিনি। কিন্তু তাদেরই উপদেশের জন্যে, যারা ভয় করে।" -(২০:২-৩) 

অবশেষে একবৎসর পর যখন আল্লাহর অভীষ্ট ইচ্ছে পূর্ণ হল, তখন এই আয়াত দ্বারা নামাজের দৈর্ঘ্য কমিয়ে দেয়া হল। "তোমার পালনকর্তা জানেন, তুমি এবাদতের জন্যে দন্ডায়মান হও রাত্রির প্রায় দুই তৃতীয়াংশ, অর্ধাংশ ও তৃতীয়াংশ এবং তোমার সঙ্গীদের একটি দলও দন্ডায়মান হয়। আল্লাহ দিবা ও রাত্রির পরিমাপ করেন। তিনি জানেন তোমরা এর পূর্ণ হিসাব রাখতে পার না। অতএব তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাপরায়ণ হয়েছেন। কাজেই কোরআনের যতটুকু তোমাদের জন্যে সহজ, ততটুকু আবৃত্তি কর।
তিনি জানেন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ্য হবে, কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে দেশ-বিদেশে যাবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে জেহাদে লিপ্ত হবে। কাজেই কোরআনের যতটুকু তোমাদের জন্যে সহজ, ততটুকু আবৃত্তি কর। 
তোমরা নামাজ কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। তোমরা নিজেদের জন্যে যা কিছু অগ্রে পাঠাবে, তা আল্লাহর কাছে উত্তম আকারে এবং পুরস্কার হিসেবে বর্ধিতরূপে পাবে। তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থণা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।" -(৭৫:২০)

এরপর মেরাজের মাধ্যমে মুহম্মদকে সরাসরি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এর বিধান দেয়াতে আটোমেটিক তাহাজ্জুতের নামাজ আর আবশ্যিক রইল না। তবে আমাদের নবী মুহম্মদ নিয়মিতই এ নামাজ পড়তেন এবং সাহাবীদেরও পড়তে উৎসাহ দিতেন। কারণ এ নামাজের ফজিলত অনেক,- has many rewards and benefits, and a way to purify the soul, enabling it to approach the Realm of God.
কথিত আছে ইয়াকু্বের পুত্ররা তাদের অতীত কৃতকর্মের কথা স্মরণ করে অনুতপ্ত হয়ে অবনত মস্তকে পিতাকে বলেছিল, ‘হে আমাদের পিতা! নিশ্চয়ই আমরা অপরাধী। আমাদের পাপমুক্তির জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর।’
উত্তরে ইয়াকুব বলেছিলেন, ‘...আমি অবশ্যই আমার প্রতিপালকের কাছে তোমাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করব। তিনি ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু।’

সন্তানদের ক্ষমার জন্যে ইয়াকুব তৎক্ষণাৎ দোয়া করার পরিবর্তে দোয়া করার ওয়াদা করেছিলেন। তিনি তৎক্ষণাৎ ওয়াদা করেননি এই কারণে যে, তিনি বিশেষ গুরুত্ব সহকারে শেষরাত্রে দোয়া করতে চেয়েছিলেন। কেননা তিনি জানতেন ঐ সময়ে দোয়া কবুল হয়। আল্লাহ রাত্রির শেষ তৃতীয়াংশে নিকটতম আকাশে ঘোষণা করেন- ‘কেউ আছে কি, যে দোয়া করবে- আমি কবুল করব? কেউ আছে কি, যে ক্ষমা প্রার্থণা করবে- আমি ক্ষমা করব?’

তবে এখন তাহাজ্জুদ সাধারণ মুসলিমদের জন্যে আবশ্যিক না হলেও-এটা ঠিক য়ে, কোরআনে মুহম্মদের উপর সবসময়ই এটা পড়ার নির্দেশ ছিল-
"And during a part of the night, pray Tahajjud beyond what is incumbent on you; maybe your Lord will raise you to a position of great glory." -আল ইসরা, ১৭:৭৯।

উপরের এই আদেশ মুহম্মদের জন্যেই প্রযোজ্য সকল মুসলমানদের জন্যে নয় এটা ঠিক, কিন্তু যেহেতু আদর্শ মুসলিম হিসেবে মুহম্মদকে অনুসরণের নির্দেশ কোরআন প্রদান করেছে তাই ঐ নামাজটি সকল মুসলিমদের জন্যে আবশ্যিক হয়ে যায় বটে (This order, although it was specifically directed to Muhammad, also refers to all Muslims, since Muhammad is to be the perfect example and guide for them in all matters).
Moreover, performing Tahajjud prayers regularly qualifies one as one of the righteous and helps one earn God's bounty and mercy. In praising those who perform the late night prayers, God says what means: "And they who pass the night prostrating themselves before their Lord and standing."আল ফুরকান, ২৫:৬৪।
নামাজের পূর্বে শরীরকে পবিত্র করা অত্যাবশ্যক। কেননা নামাজের মধ্যে মানুষ নিজেকে মহান আল্লাহর সম্মুখে হাজির করে। সুতরাং পবিত্র সেই সত্ত্বার সম্মুখে নিজেকেও পবিত্র করে নিয়ে হাজির হতে হবে। শরীরকে পবিত্র করা তথা ওজু করার নিয়ম পদ্ধতি অবশ্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এর বিধান চালু হবার হওয়ার পরপরই নাযিল হয়নি। এটা নাযিল হয়েছিল অনেক পরে-মদিনাতে হিযরতের পর। আয়াতটি এই- 
"যখন তোমরা নামাজের জন্যে ওঠ, তখন স্বীয় মুখমন্ডল ও হস্তসমূহ কনুই পর্যন্ত ধৌত কর এবং পদযুগল গিঁটসহ। যদি তোমরা অপবিত্র হও, তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও এবং যদি তোমরা রুগ্ন হও অথবা প্রবাসে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রস্রাব পায়খানা সেরে আসে অথবা তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর, অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও- অর্থাৎ স্বীয় মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।" -(৫:৬)

মেরাজ (Mi'raj) এর মাধ্যমে মুহম্মদকে দৈনিক 'পাঁচ ওয়াক্ত' নামাজের বিধান দেয়া হয়েছিল যদিও এই সংখ্যার ব্যাপারে সরাসরি কোরআনে কোন আয়াত নেই। অনেকে নামাজ সম্পর্কিত কোরআনের বিভিন্ন আয়াত বিশ্লেষণ করে অহেতুক পাঁচ ওয়াক্তের ব্যাপারটা প্রমান করার চেষ্টা করেন। তার কোন প্রয়োজন আছে কি? যাহোক প্রসঙ্গে ফিরি, মুহম্মদ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিধান নিয়ে এলে মুসলমানগণ তা পালন করা শুরু করল।এদিকে নামাজের আহকাম ও আরকান সমূহ দেখে কুরাইশগণ অবাকই হল। কারণ এটা ছিল অভূতপূর্ব। তবে সাধারণ আরবরা কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করলেও আবু জেহেল করে বসলেন। তিনি মুহম্মদকে নামাজ পড়তে নিষেধ করলেন এবং হুমকিও দিলেন যে- ‘ভবিষ্যতে নামাজ পড়লে ও সিজদা করলে আমি তোমার ঘাড় পদতলে পিষ্ট করে দেব।’ 

এর জবাবে এই আয়াতসমূহ অবতীর্ণ হয়- "সত্যি সত্যি মানুষ সীমালঙ্ঘন করে এ কারণে যে, সে নিজেকে অভাবমুক্ত মনে করে। নিশ্চয় তোমার পালনকর্তার দিকে প্রত্যাবর্তণ হবে। তুমি কি তাকে দেখেছ যে নিষেধ করে এক বান্দাকে যখন সে নামাজ পড়ে? তুমি কি দেখেছ যদি সে সৎপথে থাকে অথবা আল্লাহ ভীতি শিক্ষা দেয়? তুমি কি দেখেছ, যদি সে মিথ্যারোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়? সে কি জানে না যে, আল্লাহ দেখেন? কখনই নয় যদি সে বিরত না হয়, তবে আমি মস্তকের সামনের কেশগুচ্ছ ধরে হেঁচড়াবই- মিথ্যাচারী, পাপীর কেশগুচ্ছ। অতএব সে তার সভাষদদের আহবান করুক। আমিও আহবান করব জাহান্নামের প্রহরীদেরকে কখনই নয়, তুমি তার আনুগত্য করবে না। তুমি সিজদা কর ও আমার নৈকট্য অর্জণ কর।" -(৯৬:৬-১৯)

আবু জেহেল অবশ্য জাহান্নামের প্রহরীদেরকে পাত্তা দেননি। তিনি যখন জানতে পারলেন সেখানকার প্রহরী উনিশজন ("..(জাহান্নাম) এর উপর নিয়োজিত রয়েছে উনিশ জন ফেরেস্তা।"-৭৪:৩০) তখন তিনি কুরাইশদেরকে বলেছিলেন-‘মুহম্মদের সহচর তো মাত্র উনিশজন। অতএব, তার সম্পর্কে তোমাদের চিন্তা করার দরকার নেই।’
আর জনৈক নগন্য কুরাইশ বলেছিল, ‘হে কুরাইশ গোত্র! কোন চিন্তা নেই। এই উনিশ জনের জন্যে আমি একাই যথেষ্ট, আমি আমার ডান বাহু দ্বারা দশজনকে এবং বাম বাহু দ্বারা নয়জনকে দূর করে দিয়ে উনিশের কিচ্ছা চুকিয়ে দেব।’

এরই পরিপ্রেক্ষিতে এই আয়াত নাযিল হয়- "আমি জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক ফেরেস্তাই রেখেছি। আমি অবিশ্বাসীদের পরীক্ষা করার জন্যেই এ সংখ্যা করেছি- যাতে কিতাবীরা দৃঢ় বিশ্বাসী হয়, মুমিনদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং কিতাবীরা ও মুমিনরা সন্দেহ পোষণ না করে এবং যাতে যাদের অন্তরে রোগ আছে, তারা এবং অবিশ্বাসীরা বলে যে, আল্লাহ এর দ্বারা কি বোঝাতে চেয়েছেন? এমনিভাবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছে পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছে সৎপথে চালান। তোমার পালনকর্তার বাহিনী সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জানেন। এটা তো মানুষের জন্যে উপদেশ বৈ নয়।" -(৭৪:৩১)

যাইহোক, পরবর্তীতে সাধারণ আরবরাও নামাজরত মুসলিমদের উত্যক্তে অংশগ্রহণ করেছিল। তারা মুহম্মদকে কা'বাতে নামাজ পড়া বন্ধ করে দিয়েছিল। অত:পর কোথাও তাকে বা অন্যকোন মুসলিমকে নামাজে রত অবস্থায় দেখতে পেলে তারা তাদের প্রতি ময়লা ও নোংরা জিনিষপত্র নিক্ষেপ করত, সিজদায় গেলে পিঠের উপর উটের নাড়ি-ভূড়ি চাপিয়ে দিত।

সমাপ্ত।

 Source: http://pytheya.blogspot.com

No comments:

Post a Comment