Pages

Monday, October 14, 2013

নামাজ সারা বছরের জন্য


নামাজ সারা বছরের জন্য

 -মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ বিন রেজা

মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা কর আর মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।’                    -সূরা রুম- ৩১
নবীজি বলেন, ‘মুমিন, কাফির ও মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য হল, সালাত।’                   -মুসলিম, হা-১৩৪, মিশকাত, হা- ৫৬৯
সাহাবীরাও নামাজ পরিত্যাগকারীদের মুসলিম সমাজের মধ্যে গণ্য করতেন না। ইসলাম কবুল করা আর না করার মানদন্ড হল, নামাজ। রাসূল (সা.) সময়ে মুনাফিকরাও মুসলিম হিসেবে প্রমাণের জন্য নামাযের জামাআতে আসতো। ইচ্ছাকৃত নামাজ ত্যাগকারী বা নামাজ ফরয এটা অস্বীকারকারী কাফির ও জাহান্নামী। এ ব্যক্তি ইসলাম হতে বহিষ্কৃত। কিন্তু যে নামাযের ব্যাপারে ঈমান রাখে অথচ অলসতা ও ব্যস্ততার কারণে নামাজ ত্যাগ করে বা উদাসীনভাবে আদায় করে ও তার প্রকৃত হিফাযত করে না তার বিধান হল, ধ্বংসশীল ব্যক্তি। মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘ধ্বংস ঐসব নামাজীদের যারা নামাযে উদাসীন, যারা তা লোকদের দেখায়।’
-সূরা মাউন, ৪-৬
মুনাফিক, প্রতারক ও ফাসিকঃ মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা প্রতারণা করে আল্লাহ্র সাথে, অথচ তিনি তাদেরকেই ধোঁকায় নিক্ষেপ করেন। যখন তারা নামাযে দাঁড়ায় তখন অলসভাবে দাঁড়ায় লোক দেখানোর জন্য। আর তারা আল্লাহ্কে অল্পই স্মরণ করে।’                                -সূরা নিসা, ১৪২
‘আপনি বলুন, তোমরা ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় অর্থ ব্যয় কর তা কবুল করা হবে না। তোমরা তো ফাসিকের দল। তাদের অর্থ ব্যয় কবুল না হওয়ার কারণ হল, তারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি অবিশ্বাসী, তারা নামাযে আসে অলসতার সাথে ও ব্যয় করে সংকুচিত মনে।’                             -সূরা তওবা, ৫৩-৫৪
কাফিরদের সাথে হাশর অনুষ্ঠিতঃ নবীজি বলেন, ‘যে সালাত সংরক্ষণ করবে, তা কিয়ামতের দিন তার জন্য আলোকবর্তিকা ও মুক্তির কারণ হবে। অন্যদিকে যে নামাজ সংরক্ষণ করবে না তা তার জন্য আলোকবর্তিকা ও নাজাতের কারণ হবে না। বরং কিয়ামতের দিন সে কারুন, ফিরাউন, হামান ও উবাই ইবনে খালফের সাথে উঠবে।’
-আহমাদ, দারেমী, বায়হাকী, মিশকাত, হা- ৫৭৮
সালাতের হিফাযত হল, রুকু, সিজদা ইত্যাদি ফরয ও সুন্নাতসমূহ সঠিকভাবে ও গভীর মনোযোগসহ আদায় করা।
-মিরকাত, ২/১১৮ পৃ.
হাফিজ ইবনুল কায়্যিম (রাহ. ৭০১-৭৭৩ হি.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অর্থ সম্পদের মোহে নামাজ থেকে দূরে থাকবে তার হাশর হবে মূসা (আ.) এর চাচাতো ভাই কারুনের সাথে। রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে যে নামাজ হতে দূরে থাকবে তার হাশর হবে মিসরের নাফরমান শাসক ফিরাউনের সাথে। মন্ত্রীত্ব বা চাকুরীগত কারণে যে নামাজ হতে দূরে থাকবে তার হাশর হবে ফিরাউনের মন্ত্রী হামানের সাথে। ব্যবসায়িক কারণে যে নামাজ হতে দূরে থাকবে তার হাশর হবে মক্কার ব্যবসায়ী উবাই বিন খালফের সাথে।’
-আস সালাত ওয়া হুকমু তারিকিহা, ৬৩ পৃ.; ফিকহুস সুন্নাহ, ১/৭২
কিয়ামতের দিন কাফির নেতাদের সাথে হাশর অনুষ্ঠিত হওয়ার অর্থ হল, জাহান্নামী হওয়া। শুধু নামাজ ত্যাগ করা নয় বরং নামাযের হিফাযত না করলেও জাহান্নামী হতে হবে। অতএব হে পাঠক, গভীরভাবে ভাবুন!! চিরস্থায়ী জাহান্নামী নয়ঃ সালাত ত্যাগ কুফরি।   -মুসলিম, মিশকাত, হা-৫৬৯, ৫৭৪, মিরআত, ২/২৭১
সাহাবীরাও একে কুফরী জানতেন।
-তিরমিযী, মিশকাত, হা- ৫৭৯, মিরআত, ২/২৮৩
এরা জাহান্নামী। তবে কালিমা অস্বীকারকারী কাফিরদের ন্যায় চিরস্থায়ী জাহান্নামী নয়। শর্ত হল, তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাত বিশ্বাস করতে হবে, ইসলামের হালাল-হারাম, ফরয-ওয়াজিব বিশ্বাস করতে হবে, শিরক করা যাবে না। এরা কর্মগত কাফির, বিশ্বাসগত কাফির নয়। এরা কালিমার বরকতে ও কবীরা গুনাহগারদের জন্য নবীজির শাফায়াতের ফলে শেষ পর্যায়ে জান্নাতে যাবে।              -বুখারী, মুসলিম, মিশকাত, হা-৫৫৭৩-৫৫৭৪
তবে তারা জাহান্নামী বলে পরিচিত হবে।
-বুখারী, মিশকাত, হা-৫৫৮৫
ইমাম মালেক (৯৩-১৭৯ হি.), ইমাম শাফেয়ী (র. ১৫০-২০৪ হি.)সহ অধিকাংশ আলিমের মত হল, নামাজ ত্যাগকারী ফাসিক এবং তাকে তাওবা করতে হবে। যদি সে তাওবা করে নামাজ আদায় শুরু না করে তাহলে তার শাস্তি হল, মৃত্যুদন্ড। ইমাম আবু হানিফা (রা. ৮০-১৫০হি.) বলেন, তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে এবং নামাজ আদায় না করা পর্যন্ত জেলখানায় আবদ্ধ করে রাখতে হবে।    -ফিকহুস সুন্নাহ, ১/৭৩, নায়নুল আওতার, ২/১৩
ইমাম আহমদ (রা. ১৬৪-২৪১ হি.) বলেন, ঐ ব্যক্তিকে নামাযের জন্য ডাকার পরেও যদি সে অস্বীকার করে ও বলে যে, আমি নামাজ আদায় করব না এবং এভাবে নামাযের ওয়াক্ত শেষ হয় তখন তাকে হত্যা করতে হবে।
-মিশকাত, ২/১১৩, নায়নুল আওতার, ২/১৫
এ বিধান ইসলামী সরকার বাস্তবায়ন করবে। ঐ ব্যক্তির জানাযা ইমাম বা বড় আলিম পড়বে না। সাধারণ লোক পড়বে।
-ফাতাওয়ায়ে নযীরিয়া, ১/৩৯৬
রাসূল (সা.) সামান্য গনিমতের মালের খেয়ানতকারী এবং আত্মহত্যাকারীর জানাযা পড়েননি। অন্যদের পড়তে বলেন।
-আহমদ, নায়ল, ৫/৪৭, মুসলিম, মিশকাত, হা-৪০১১
ফরয নামাযের খেয়ানতকারী ব্যক্তির ব্যাপারে কেমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে মুমিন পাঠক, গভীরভাবে ভাবুন!! বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রাহ.) বলেন, যারা মোটেই নামাজ পড়ে না ঐসব বেনামাজীদের মুসলিমদের কবরস্থানে কবর দিয়ো না এবং জানাযা পড়ো না।                           -গুনইয়াতুত তলেবীন, ৭১৭ পৃ.
ইমাম আবদুল ওয়াহহাব শাআরানিও (রাহ.) এ ধরনের কথা বলেছেন।

Source: http://www.mashikdeendunia.com

No comments:

Post a Comment