Pages

Saturday, September 28, 2013

নামাজে একাগ্রতা অর্জনের গুরুত্ব ও উপায়

নামাজে একাগ্রতা অর্জনের গুরুত্ব ও উপায়

- আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব

 

ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হ’ল নামাজ। সর্বাবস্থায় আল্লাহর স্মরণকে হৃদয়ে সঞ্চারিত রাখার প্রক্রিয়া হিসাবে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করেছেন। আল্লাহ বলেন- ‘আর তুমি নামাজ কায়েম কর আমাকে স্মরণ করার জন্য’। [ত্বোয়া-হা ২০/১৪]
আর প্রতিটি কাজে সফলতার জন্য মৌলিক শর্ত হল একাগ্রতা ও একনিষ্ঠতা। আর এ বিষয়টি নামাজের ক্ষেত্রে আরো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ইবাদতের প্রকৃত স্বাদ আস্বাদনের জন্য একাগ্রতার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে এই ব্যস্ত যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে একাগ্রচিত্তে নামাজ আদায় করা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। অথচ একাগ্রতাবিহীন নামাজ  শুধুমাত্র দায়সারা ও শারীরিক ব্যায়ামের উপকারিতা ব্যতীত তেমন কিছুই বয়ে আনে না। হৃদয়ে সৃষ্টি করে না প্রভুর একান্ত সান্নিধ্যে কিছু সময় অতিবাহিত করার অনাবিল প্রশান্তি। সঞ্চারিত হয় না নেকী অর্জনের পথে অগ্রগামী হওয়ার এবং যাবতীয় অশ্লীলতা ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকার কোন অনুপ্রেরণা। সার্বিক অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে রাসুল সা.-এর নিম্নোক্ত হাদিসটি একটি কঠিন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই উম্মত হতে সর্বপ্রথম নামাজের একাগ্রতাকে উঠিয়ে নেয়া হবে, এমনকি তুমি তাদের মধ্যে কোন একাগ্রচিত্ত মুসল্লি খুঁজে পাবে না’। [ত্বাবারাণী; ছহিহুল জামে‘ হা/২৫৬৯]
একই বক্তব্য প্রতিধ্বনিত হয়েছে হুযায়ফা রা.-এর নিম্নোক্ত বাণীতে। তিনি বলেন, ‘সর্বপ্রথম তোমরা নামাজে একাগ্রতা হারাবে। অবশেষে হারাবে নামাজ।
অধিকাংশ নামাজ  আদায়কারীর মধ্যে কোনো কল্যাণ অবশিষ্ট থাকবে না। হয়তো মসজিদে প্রবেশ করে একজন বিনয়ী-একাগ্রতা সম্পন্ন নামাজ  আদায়কারীকেও পাওয়া যাবে না’।  [ইবনুল ক্বাইয়ম, মাদারিজুস সালেকীন বৈরূত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, ১৯৯৬), ১/৫১৭ পৃঃ]
বস্তুতঃ খুকূবিহীন নামাজ বান্দাকে অন্যায় ও অশ্লীলতা থেকে দূরে রাখে না। তাইতো আল্লাহ তাআলা একাগ্রচিত্তের অধিকারী মুসল্লিদেরকেই সফল মুমিন বলে আখ্যায়িত করেছেন। বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে নামাজে একাগ্রতার প্রয়োজনীয়তা, ফজিলত এবং একাগ্রতা সৃষ্টির কিছু উপায় সংক্ষেপে আলোচিত হল।
খুশু বা একাগ্রতার পরিচয়
‘খুশু’-এর আভিধানিক অর্থ হ’ল দীনতার সাথে অবনত হওয়া, ধীরস্থির হওয়া ইত্যাদি। ইবনু কাছীর বলেন, খুশু অর্থ- স্থিরতা, ধীরতা, গাম্ভীর্য, বিনয় ও নম্রতা।
ইবনুল ক্বাইয়ম বলেন, খুশু হল হৃদয়কে দীনতা ও বিনয়ের সাথে প্রতিপালকের সম্মুখে উপস্থাপন করা। [মাদারিজুস সালেকিন ১/৫১৬]
প্রত্যেক ইবাদত কবুল হওয়া এবং তার প্রকৃত স্বাদ আস্বাদন করার আবশ্যিক শর্ত হল খুশু। আর শ্রেষ্ঠ ইবাদত নামাজের ক্ষেত্রে এর আবশ্যিকতা যে কত বেশি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তোমরা আল্লাহর সম্মুখে দণ্ডায়মান হও বিনীতভাবে’ [বাকারাহ ২/২৩৮]
তিনি আরো বলেন, ‘ঐ সকল মুমিন সফলকাম, যারা নামাজে বিনয়াবনত’ [মুমিনুন ২৩/১-২]
খুশু বা একাগ্রতার স্থান হৃদয়ের গভীরতম প্রদেশে, কিন্তু এর প্রভাব বিকশিত হয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে। অন্যমনস্ক হওয়ার দরুন আত্মিক জগতে বিঘœ সৃষ্টি হলে বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও তার কুপ্রভাব পড়ে। তাই হৃদয় জগতকে একাগ্রতা ও একনিষ্ঠতায় পরিপূর্ণ করতে সক্ষম হলেই নামাজের প্রকৃত স্বাদ পাওয়া সম্ভব।
নামাজের মধ্যে খুকূ কেবল তারই অর্জিত হবে, যে সবকিছু ত্যাগ করে নিজেকে শুধুমাত্র নামাজের জন্য নিবিষ্ট করে নিবে এবং সবকিছুর ঊর্ধ্বে নামাজকে স্থান দিবে। তখনই নামাজ তার অন্তরকে প্রশান্তিতে ভরে দিবে। রাসুলুল্লাহ সা. বলতেন, ‘নামাজেই আমার চোখের প্রশান্তি রাখা হয়েছে’।  [আহমাদ, মিশকাত হা/৫২৬১, সনদ হাসান]
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে মনোনীত বান্দাদের আলোচনায় ‘খুশু-খুযু’র সাথে নামাজ আদায়কারী নারী-পুরুষের কথা উল্লেখ করেছেন এবং তাদের জন্য নির্ধারিত ক্ষমা ও সুমহান প্রতিদানের ঘোষণা দিয়েছেন [আহযাব ৩৩/৩৫]
‘খুশু’ বান্দার উপর নামাজের এই কঠিন দায়িত্বকে স্বাভাবিক ও প্রশান্তিময় করে তোলে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয়ই তা বিনয়ী-একনিষ্ঠ ব্যতীত অন্যদের উপর অতীব কষ্টকর’ [বাক্বারা ২/৪৫]
বস্তুত যে কোনো ইবাদতের ক্ষেত্রে যখন রাসুল সা.-এর নিম্নোক্ত বাণীর অনুসরণ করা হবে, তখনই তা এক সফল ইবাদতে পরিণত হবে। হৃদয়জগতকে অপার্থিব আলোয় উদ্ভাসিত করবে। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর ইবাদত কর এমনভাবে, যেন তাঁকে তুমি দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও, তবে তিনি যেন তোমাকে দেখছেন’।  [বুখারি হা/৫০; মুসলিম হা/৮; মিশকাত হা/২]
একাগ্রতাপূর্ণ নামাজের ফজিলত
খুশু-খুযু পূর্ণ নামাজ আদায়কারীর মর্যাদা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা পাঁচওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। অতএব যে ভাল করে অজু করবে, সময় মত নামাজ  আদায় করবে এবং রুকু-সিজদা সঠিকভাবে আদায় করবে, আল্লাহর দায়িত্ব তাকে ক্ষমা করে দেওয়া। আর যে এমনটি করবে না, তার প্রতি আল্লাহর কোন দায়িত্ব নেই। তিনি শাস্তিও দিতে পারেন, ক্ষমাও করতে পারেন’।  [আহমাদ, আবুদাউদ হা/৪২৫; মিশকাত হা/৫৭০]
রাসুল সা. আরো বলেন, ‘যে সুন্দরভাবে অজু করে, অতঃপর মন ও শরীর একত্র করে (একাগ্রতার সাথে) দু’রাকআত নামাজ আদায় করে, (অন্য বর্ণনায় এসেছে- যে নামাজে ওয়াসওয়াসা স্থান পায় না) তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়)।  [নাসাঈ হা/১৫১; বুখারি হা/১৯৩৪; মিশকাত হা/২৮৭]
খুকূ ও একাগ্রতা অর্জনের উপায়
নামাজে একাগ্রতা অর্জনের উপায়গুলি দু’ভাগে বিভক্ত-
(১) একাগ্রতা সৃষ্টি ও তা শক্তিশালীকরণের পদ্ধতি গ্রহণ করা।
(২) ‘খুশু’ ও ‘খুজু’তে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী বিষয়গুলো পরিহার করা।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, দু’টি বস্তু ‘খুশু’র জন্য সহায়ক। প্রথমটি হ’ল মুসল্লি যা বলবে, যা করবে; তা অনুধাবন করবে। স্বীয় তেলাওয়াত ও দোয়াসমূহ গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করবে। সর্বদা হৃদয়ে জাগরুক রাখবে যে, সে আল্লাহর সম্মুখে প্রার্থনারত এবং তিনি তাকে দেখছেন। কেননা নামাজরত অবস্থায় মুসল্লি আল্লাহর সাথেই কথপোকথন করে। হাদিসে জিবরিলে ইহসানের সংজ্ঞায় এসেছে, ‘আল্লাহর ইবাদত কর এমনভাবে, যেন তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। যদি তুমি দেখতে না পাও, তবে তিনি তোমাকে দেখছেন’।  [বুখারি হা/৫০; মুসলিম হা/৮; মিশকাত হা/২]
এভাবে মুসল্লি যতই নামাজের স্বাদ আস্বাদন করবে, ততই নামাজের প্রতি তার আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে। এটা নির্ভর করে তার ঈমানি শক্তির উপর। আর তা বৃদ্ধি করার অনেক উপকরণ রয়েছে।
রাসুল সা. বলতেন, ‘আমার জন্য প্রিয়তর করা হয়েছে নারীও সুগন্ধি। আর নামাজকে করা হয়েছে আমার চোখের প্রশান্তি’।  [আহমাদ, নাসাঈ; মিশকাত হা/৫২৬১]
অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল সা. বেলাল রা.-কে উদ্দেশ্য করে বলছেন,  ‘হে বেলাল, নামাজের একামত দাও, আমাদেরকে প্রশান্তি দাও’।  [আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১২৫৩]
দ্বিতীয়টি হ’ল প্রতিবন্ধকতা দূর করা। অন্তরের একাগ্রতা বিনষ্টকারী বস্তু ও অপ্রয়োজনীয় চিন্তা-ভাবনা পরিহার করা এবং নামাজের মৌলিক উদ্দেশ্য ব্যাহতকারী সকল আকর্ষণীয় বস্তুকে পরিত্যাগ করা।
একাগ্রতা সৃষ্টি ও শক্তিশালী করণের উপায়সমূহ
(১) নামাজের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ
নামাজে একাগ্রতা সৃষ্টির জন্য প্রথমতঃ নিজেকে নামাজের জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে। যেমন মুওয়াজ্জিন আযান দিলে তার জওয়াব দেওয়া, আযান শেষে নির্দিষ্ট দো‘আ পড়া, অতঃপর বিসমিল্লাহ বলে সঠিকভাবে ওযূ করা, ওযূর পরে দোয়া পড়া ইত্যাদি। মুখ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য মিসওয়াকের প্রতি যতœশীল হওয়া আবশ্যক। রাসুল সা. বলেছেন, ‘বান্দা যখন নামাজের জন্য দণ্ডায়মান হয় এবং তেলাওয়াত করে, ফেরেশতা তার পিছনে দাঁড়িয়ে তেলাওয়াত শুনতে থাকে এবং শুনতে শুনতে তার নিকটবর্তী হয়। অবশেষে সে তার মুখকে বান্দার মুখের সাথে লাগিয়ে দেয়। ফলে সে যা কিছু তেলাওয়াত করে, তা ফেরেশতার মুখগহবরেই পতিত হয়। অতএব, ‘তোমরা (নামাজে) কুরআন তেলাওয়াতের জন্য মুখকে পরিচ্ছন্ন কর’। [বায়হাকি, বাযযার;  সিলসিলা ছহিহাহ হা/১২১৩]
অতঃপর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সুগন্ধিযুক্ত পোষাক পরিধান করে নামাজের জন্য বের হবে। যা মুসল্লির হৃদয়ে অনাবিল প্রশান্তি বয়ে আনে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা নামাজের সময় সুন্দর পোষাক পরিধান কর’ [আ‘রাফ ৭/৩১]
এছাড়া নামাজের স্থানকে পবিত্র করা, ধীর-স্থিরভাবে মসজিদে গমন, পায়ে পা, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাতার সোজা করে দাঁড়ানো প্রভৃতি বিষয়গুলিও নামাজে একাগ্রতা সৃষ্টির জন্য কার্যকর।
(২) ধীর-স্থিরতা অবলম্বন করা
নামাজে একাগ্রতা আনার জন্য ধীর-স্থিরতা অবলম্বন করা আবশ্যক। রাসুল সা. প্রত্যেক অঙ্গ নিজ নিজ স্থানে ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতেন।  [আবুদাঊদ, ছিফাতু সালাতিন্নাবি ১/১৩৪]
নামাজে ভুলকারী ব্যক্তিকে তিনি ধীরে-সুস্থে নামাজ আদায় করার শিক্ষা দিয়ে বলেন, ‘এভাবে আদায় না করলে তোমাদের কারো নামাজ শুদ্ধ হবে না’।  [আবুদাঊদ হা/৮৫৮, সনদ ছহীহ]
আবু কাতাদা রা. হ’তে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেছেন, ‘নিশৃষ্টতম চোর হ’ল সেই ব্যক্তি, যে নামাজে চুরি করে। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! নামাজে কিভাবে চুরি করে?  তিনি বললেন, ‘যে রুকু-সিজদা পূর্ণভাবে আদায় করে না’।  [আহমাদ ;:মিশকাত হা/৮৮৫, সনদ ছসহি]
রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি পূর্ণভাবে রুকূ করে না এবং সিজদাতে শুধু ঠোকর দেয়, সে ঐ ক্ষুধার্ত ব্যক্তির ন্যায়, যে দু’তিনটি খেজুর খেল, কিন্তু পরিতৃপ্ত হল না’।  [তাবারানি; সহিহুল জামে হা/৫৪৯২, সনদ হাসান]
এছাড়া রাসুল সা. সংক্ষেপে নামাজ আদায় করতে নিষেধ করেছেন। সাথে সাথে তিনি দীর্ঘ নামাজকে সর্বোত্তম নামাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। [মুসলিম হা/৭৫৬; মিশকাত হা/৮০০]
ধীর-স্থিরতা ব্যতীত একাগ্রতাপূর্ণ সফল নামাজ আদায় করা অসম্ভব। কাকের ন্যায় ঠোকর দিয়ে আদায়শৃত নামাজে একদিকে যেমন একাগ্রতা থাকে না, অন্যদিকে তেমনি নেকী অর্জনও সুদূর পরাহত হয়ে পড়ে।
(৩) নামাজে মৃত্যুকে স্মরণ করা
রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘তুমি নামাজে মৃত্যুকে স্মরণ কর। কারণ যে ব্যক্তি নামাজে মৃত্যুকে স্মরণ করবে, তার নামাজ যথার্থ সুন্দর হবে। আর তুমি সেই ব্যক্তির ন্যায় নামাজ আদায় কর, যে জীবনে শেষবারের মত নামাজ আদায় করে নিচ্ছে’। [দায়লামী; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৪২১]
রাসুল সা.-এর নিকটে জনৈক ব্যক্তি সংক্ষিপ্ত উপদেশ কামনা করলে তিনি তাকে বললেন, ‘যখন তুমি নামাজে দন্ডায়মান হবে, তখন এমনভাবে নামাজ আদায় কর, যেন এটিই তোমার জীবনের শেষ নামাজ’। [ইবনু মাজাহ; মিশকাত হা/৫২২৬, সনদ হাসান]
মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু তার সময়-ক্ষণ অনিশ্চিত। তাই বান্দাকে তার প্রতিটি নামাজকেই ‘বিদায়ী নামাজ’ হিসাবে আদায় করতে হবে। মনে করতে হবে যে, এটাই তার জীবনের শেষ নামাজ; প্রভুর সাথে একান্ত আলাপের শেষ সুযোগ। সর্বদা এ চিন্তা অন্তরে জাগরূক রাখতে পারলে তার প্রতিটি নামাজই এক বিশেষ নামাজে পরিণত হবে।
(৪) পঠিত আয়াত ও দো‘আ সমূহ গভীরভাবে অনুধাবন করা
নামাজে পঠিত প্রতিটি আয়াত ও দো‘আ গভীর মনোযোগে অর্থ বুঝে পড়তে হবে এবং শুনতে হবে। বিশেষত পঠিত দো‘আ সমূহের অর্থ একান্তভাবেই জানা আবশ্যক। কুরআনের আয়াত সমূহ শ্রবণে যেসব বান্দা প্রভাবিত হয়, তাদের প্রশংসা করে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যারা তাদের রবের আয়াতসমূহ স্মরণ করিয়ে দিলে বধির ও অন্ধদের মত পড়ে থাকে না’ [ফুরকান ২৫/৭৩]
এতদ্ব্যতীত শিক্ষিত ব্যক্তিদের জন্য কুরআনের তাফসীর পাঠ করা উচিত। খ্যাতনামা মুফাসসির ইবনু জারীর তাবারি বলেন, ‘আমি আশ্চর্যান্বিত হই সেই সব পাঠককে দেখে, যারা কুরআন পাঠ করে অথচ তার মর্ম জানে না। সে কিভাবে এর স্বাদ পাবে’?  [মাহহুদ শাকের কর্তৃক তাফসিরে তাবারানি ভূমিকা ১/১০]
একটি আয়াত বার বার পাঠ করা এবং সে সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করাও নামাজে একাগ্রতা সৃষ্টির জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আবু যর গিফারী রা. হ’তে বর্ণিত, রাসুল সা. একদিন তাহাজ্জুদ নামাজে কেবলমাত্র ‘যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করেন তবে তারাতো আপনারই বান্দা, আর তাদেরকে যদি ক্ষমা করেন, তবে নিশ্চয়ই আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’ [মায়েদাহ ৫/১১৮] -এই আয়াতটি পড়তে পড়তেই রাত শেষ করেছিলেন। [নাসাঈ, ইবনু মাজাহ; মিশকাত হা/১২০৫, সনদ ছহীহ]
হুযায়ফা রা. হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,
‘আমি রাসুলুল্লাহ সা.-এর সাথে কোন এক রাতে নামাজ পড়েছিলাম। লক্ষ্য করলাম, তিনি একটি একটি করে আয়াত পড়ছিলেন। যখন আল্লাহর প্রশংসামূলক কোন আয়াত আসত, আল্লাহর প্রশংসা করতেন। যখন প্রার্থনা করার আয়াত আসত, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন। যখন আশ্রয় চাওয়ার আয়াত আসত, আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইতেন’।  [মুসলিম হা/৭৭২]
নামাজে  আয়াত  সমূহ  অনুধাবন  করা  ও তার ফলাফলের বাস্তবতা জানার জন্য নিম্নোক্ত হাদীছটিও প্রণিধানযোগ্য।
আতা রা. বলেন, একদা আমি ও উবাইদ ইবনে ওমায়ের রা. আয়েশা রা.-এর নিকটে গমন করি। উবাইদ আয়েশাকে অনুরোধ করলেন, আপনি আমাদেরকে রাসুল সা.-এর একটি অতি আশ্চর্যজনক ঘটনা শুনান। আয়েশা রা. এ কথা শুনে কেঁদে ফেললেন। অতঃপর বললেন, এক রাতে উঠে রাসুল সা. আমাকে বললেন, আয়েশা তুমি আমাকে ছাড়, আমি প্রভুর ইবাদতে লিপ্ত হই। আমি বললাম, আল্লাহর কসম, আমি আপনার নৈকট্য যেমন পসন্দ করি এবং আপনার পসন্দের জিনিসও তেমনি পসন্দ করি। আয়েশা রা. বলেন, রাসুল সা. উঠে ওযূ করলেন এবং নামাজে দাঁড়ালেন। অতঃপর কাঁধে আরম্ভ করলেন। কাঁদতে কাঁদতে তার বক্ষ ভিজে গেল। এমনকি এক পর্যায়ে (পায়ের নীচের) মাটি পর্যন্ত ভিজে গেল। বেলাল তাঁকে (ফজরের) নামাজের সংবাদ দিতে এসে দেখেন তিনি কাঁদছেন। বেলাল বললেন, হে আল্লাহর রাসুল সা.! আপনি কাঁদছেন, অথচ আল্লাহ আপনার পূর্বের ও পরবর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন? রাসুল সা. বললেন, হে বেলাল! আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হব না? আজ রাতে আমার উপর কয়েকটি আয়াত (আলেইমরান ১৯০-২০০) নাযিল হয়েছে। ‘যে ব্যক্তি এগুলো পড়বে, কিন্তু চিন্তা-ভাবনা করবে না, সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’। [ছহীহ ইবনু হিববান; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬৮]
(৫) প্রতিটি আয়াত তেলাওয়াতের পর ওয়াকফ করা
এ পদ্ধতি একদিকে যেমন পঠিত আয়াত সম্পর্কে চিন্তা ও উপলব্ধি করতে সহায়ক হয়, অন্যদিকে তেমনি তা একাগ্রতা সৃষ্টির জন্য অত্যন্ত কার্যকর। রাসুল সা.-এর কুরআন তেলাওয়াতের ধরন ছিল এরূপ। তিনি প্রতিটি আয়াতের শেষে ওয়াকফ করতেন। [আবুদাঊদ হা/৪০০১, সনদ ছহীহ]
(৬) মধুর স্বরে স্থিরতার সাথে তেলাওয়াত করা
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘স্পষ্টভাবে ধীরে ধীরে কুরআন তেলাওয়াত কর’ [মুযযাম্মিল ৪] রাসুলুল্লাহ সা. প্রতিটি সূরা তারতীল সহকারে তেলাওয়াত করতেন। [মুসলিম হা/৭৩৩, তিরমিযী হা/৩৭৩]
মধুর স্বরে ধীরগতির পড়া খুকূ বা একাগ্রতা সৃষ্টিতে যেমন সহায়ক ভূমিকা পালন করে, তাড়াহুড়ার সাথে দ্রুতগতির পড়া তেমনি একাগ্রতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। রাসুল সা. বলেন,
‘তোমরা সুমধুর স্বরে কুরআন তেলাওয়াত কর। কারণ সুন্দর আওয়াজ কুরআনের সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি করে’। [দারেমী; মিশকাত হা/২২০৮; ছহীহাহ হা/৭৭১]
তবে এখানে সৌন্দর্যের অর্থ গভীর ভাবাবেগ এবং আল্লাহভীতি সহকারে সুন্দরভাবে তেলাওয়াত করা। যেমন রাসুল সা. অন্য হাদীছে বলেন,
‘সবচেয়ে সুন্দর আওয়াজে কুরআন তেলাওয়াতকারী ঐ ব্যক্তি, যার তেলাওয়াত শুনে তোমার মনে হবে যে, সে আল্লাহকে ভয় করছে’।  [ইবনু মাজাহ হা/১৩৩৯, সনদ ছহীহ]
(৭) আল্লাহ বান্দার ডাকে সাড়া দিচ্ছেন একথা স্মরণ করা
নামাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবটাই মূলত মহান প্রতিপালকের কাছে বান্দার একান্ত প্রার্থনা। তাই মুসল্লিকে সর্বদা মনে করতে হবে যে, আল্লাহ তার প্রতিটি প্রার্থনায় সাড়া দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে রাসুল সা.-এর নিম্নোক্ত হাদিসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি নামাজ কে আমার এবং আমার বান্দার মাঝে দু’ভাগে ভাগ করেছি। বান্দা আমার কাছে যা কামনা করবে তাই পাবে।
যখন আমার বান্দা বলে, (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি সারা জাহানের মালিক)।
তখন আল্লাহ বলেন, (বান্দা আমার প্রশংসা করল)। যখন বলে, (পরম করুণাময় অসীম দয়াবান) আল্লাহ বলেন, (বান্দা আমার গুণগান করল)। যখন বলে, (বিচার দিবসের মালিক) আল্লাহ বলেন, (বান্দা আমার যথাযথ মর্যাদা দান করল)। যখন বলে, (আমরা কেবলমাত্র আপনারই ইবাদত করি এবং কেবলমাত্র আপনারই সাহায্য প্রার্থনা করি)। আল্লাহ বলেন, (এটি আমার ও আমার বান্দার মাঝে, আর আমার বান্দা যা চাইবে, তাই পাবে)। যখন বলে, (আপনি আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করুন। এমন ব্যক্তিদের পথ, যাদেরকে আপনি পুরস্কৃত করেছেন। তাদের পথ নয়, যারা অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট হয়েছে)। আল্লাহ তাআলা বলেন, (এটা আমার বান্দার জন্য, আর আমার বান্দা যা প্রার্থনা করবে তাই পাবে)।  [মুসলিম হা/৩৯৫; মিশকাত হা/৮২৩]
রাসুল সা. অন্য হাদীছে বলেন, ‘তোমাদের কেউ নামাজে দাঁড়ালে সে মূলত তার প্রভুর সাথে কথোপকথন করে। তাই সে যেন দেখে, কিভাবে সে কথোপকথন করছে’।  [মুস্তাদরাক হাকেম; ছহিহুল জামে‘ হা/১৫৩৮]
উপরোক্ত হাদিস দু’টি স্মরণে থাকলে নামাজে একাগ্রতা বজায় রাখা সহজ হয়ে যায়।
(৮) সিজদার স্থানেই দৃষ্টি নিবন্ধ রাখা
নামাজে একাগ্রতা সৃষ্টির জন্য মুসল্লীকে দৃষ্টি অবনত রাখতে হবে এবং আশেপাশে দৃষ্টি দেওয়া যাবে না। রাসুল সা. নামাজের সময় মস্তক অবনত রাখতেন এবং দৃষ্টি রাখতেন মাটির দিকে। [বায়হাক্বী, হাকেম; আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নবী, পৃঃ ৬৯]
আর যখন তাশাহহুদের জন্য বসবে, তখন শাহাদত আঙ্গুলের প্রতি দৃষ্টি রাখবে। রাসুল সা. যখন তাশাহহুদের জন্য বসতেন, শাহাদত আঙ্গুলের মাধ্যমে কিবলার দিকে ইশারা করতেন এবং সেদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতেন। [ইবনে হিববান হা/১৯৪৭; ইবনে খুযায়মা হা/৭১৯, সনদ ছহীহ]
(৯) ভিন্ন ভিন্ন সূরা ও দো‘আ সমূহ পাঠ করা
নামাজে সবসময় একই সূরা ও একই দোআ না পড়ে, বিভিন্ন সূরা ও হাদিছে বর্ণিত বিভিন্ন দো‘আ পাঠ করলে, এর দ্বারা নতুন নতুন প্রার্থনা ও ভাবাবেগের সৃষ্টি হয়। এজন্য মুসল্লীকে অধিক সংখ্যক দো‘আ এবং কুরআনের আয়াত মুখস্থ করা জরূরী।
(১০) আয়াতে তেলাওয়াতের সিজদা থাকলে সিজদা করা
সিজদায়ে তেলাওয়াত নামাজে একদিকে যেমন একাগ্রতা বৃদ্ধি করে, অন্যদিকে শয়তানকে দূরে সরিয়ে দেয়। আবু হুরায়রা রা. হ’তে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেন, বনূ আদম যখন তেলাওয়াত শেষে সিজদা করে, শয়তান তখন কাঁদতে কাঁদতে দূরে সরে যায়। আর বলে, আফসোস! আদম সন্তান সিজদার নির্দেশ পেয়ে সিজদা করেছে- তার জন্য জান্নাত। আর আমি সিজদার নির্দেশ পেয়ে অমান্য করেছি- আমার জন্য জাহান্নাম’। [মুসলিম হা/৮১; মিশকাত হা/৮৯৫]
(১১) শয়তান হ’তে আল্লাহর নিকট পানাহ চাওয়া
শয়তান মানুষের চিরশত্র“। যার প্রধান কাজই হ’ল ইবাদতে বান্দার একাগ্রতা নষ্ট করা এবং এতে সন্দেহ সৃষ্টি করা।
একদিন ওছমান বিন আবুল ‘আছ রা. রাসুল সা.-কে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! ‘শয়তান আমার এবং আমার নামাজ ও ক্বিরাআতের মাঝে প্রতিবন্ধকতা এবং নামাজে সন্দেহ সৃষ্টি করে। রাসুল সা. বললেন,  ‘এ শয়তানটিকে ‘খিনযাব’ বলা হয়। যখন তুমি এর প্ররোচনা বুঝতে পারবে, আল্লাহর কাছে পানাহ চাইবে এবং বাম দিকে তিনবার থুক মারবে। তিনি বলেন, আমি এমনটি করেছি, আল্লাহ তাআলা আমার থেকে শয়তানের ওয়াসওয়াসা দূর করে দিয়েছেন’। [মুসলিম হা/২২০৩; মিশকাত হা/৭৭]
রাসুল সা. বলেন, ‘তোমাদের কেউ নামাজে দাঁড়ালে শয়তান ভুলভ্রান্তি ও সন্দেহ সৃষ্টির জন্য নিকটবর্তী হয়, ফলে এক পর্যায়ে সে রাকআত সংখ্যা ভুলে যায়। কারো এমন হলে বসা অবস্থায় দু’টি সিজদা করে নিবে’। [বুখারি হা/১২৩২]
(১২) একাগ্রতার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জানা
রাসুল সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজের সময় হলে সুন্দরভাবে ওযূ করে এবং একাগ্রতার সাথে সুন্দরভাবে রুকূ-সিজদা করে নামাজ  আদায় করে, তার এ নামাজ  পূর্বের সকল গুনাহের কাফফারা হয়ে যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে কোন কবিরা গুনাহে লিপ্ত হয়। আর এ সুযোগ তার সারা জীবনের জন্য’। [মুসলিম হা/২২৮; মিশকাত হা/২৮৬]
জানা আবশ্যক যে, একাগ্রতা ও খুকূর পরিমাণ অনুপাতে নামাজে ছওয়াব অর্জিত হয়। রাসুল সা. বলেন,
‘মুসল্লী নামাজ  আদায় করে, কেউ পায় দশভাগ নেকী, কেউ নয়ভাগ, আটভাগ, সাতভাগ, ছয়ভাগ, পাঁচভাগ, চারভাগ, তিনভাগ আবার কেউ অর্ধেক নেকী অর্জন করে’। [আহমাদ হা/১৮৯১৪; ছহীহুল জামে‘ হা/১৬২৬]
(১৩) নামাজের পরে বর্ণিত দো‘আসমূহ ও নফল নামাজ গুলি আদায় করা
নামাজ  পরবর্তী মাসনূন দো‘আ সমূহ পাঠ এবং সুন্নাতে রাতেবা সমূহ আদায় করলে নামাজের মধ্যে যে একাগ্রতা, বরকত ও  খুকূ অর্জিত হয়, পরর্তীতে তা বিদ্যমান থাকে। সেকারণ সম্পাদিত ইবাদতের কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য পরবর্তী ইবাদতগুলি অতীব গুরুত্ববহ। তাই নামাজের পরে মুসল্লী মাসনূন দো‘আগুলি পাঠ করবে। অতঃপর সারাদিনে মোট ১২ অথবা ১০ রাক‘আত সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাসহ বেশি বেশি নফল নামাজ  আদায় করার চেষ্টা করবে। কারণ নফল নামাজ  দ্বারা ফরযের ত্র“টি-বিচ্যুতি মোচন করা হয়। [আবুদাঊদ হা/৮৬৪; তিরমিজি হা/৪১৩; মিশকাত হা/১৩৩০, সনদ ছহীহ]
(১৪) বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা
অধিক কুরআন তেলাওয়াত হৃদয় জগতে সদাসর্বদা দ্বীনি চেতনা জাগরূক রাখে। সাথে সাথে মনের গভীরে এক ধরনের এলাহি প্রশান্তির আবহ সৃষ্টি করে। যা নামাজের একাগ্রতারজন্য একান্ত প্রয়োজন। তাই মুসল্লিীকে একাগ্রতা সৃষ্টির জন্য বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াতে অভ্যস্ত হ’তে হবে।
উপরোক্ত আলোচনায় একাগ্রতা সৃষ্টির উপায় সমূহ স্পষ্ট করা হয়েছে। আশা করি উল্লিখিত বিষয়গুরো খেয়ালের সাথে মনের করে নামায আদায় করলে রাসূলের ঘোষিত নামাযের দশ ভাগের দশ ভাগ সওয়াবই আমরা পাব ইনশাআল্লা। আল্লাহ তাআলা আমাদের খুশুখুযুর সাথে নামায আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

No comments:

Post a Comment