Pages

Wednesday, August 7, 2013

নামাজরত অবস্থায় রিং বেজে উঠলে কী করবেন?

নামাজরত অবস্থায় রিং বেজে উঠলে কী করবেন?
 
নামাজ ভঙ্গের যেসব কারণ আছে তন্মধ্যে একটি হলো আমলে কাসীর।
আমলে কাসীর বলা হয়, নামাজি ব্যক্তির এমন কোনো কাজে লিপ্ত হয়ে যাওয়া যা অন্য কেউ দেখলে মনে করবে সে নামাজে নেই। আর নামাজি ব্যক্তির প্রতি অন্য ব্যক্তির এরূপ ধারণা তখনই সৃষ্টি হয় যখন সে দু'হাত ব্যবহার করে কোনো কাজ করে। এক হাত নামাজে ব্যস্ত রেখে অন্য হাত দিয়ে কাজ করলে এমন ধারণা মোটেও সৃষ্টি হয় না।

এ কারণেই ফিকাহবিদগণ নামাজের মধ্যে প্রয়োজনে একহাত ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছেন। তারা বলেছেন নামাজরত অবস্থায় টুপি উঠানো, জামার হাতা নামানো, সিজদার স্থানের কঙ্কর সরানো, শরীর চুলকানো এবং এ জাতীয় অন্যান্য কাজ করার জন্য এক হাত ব্যবহার করা যাবে। কোনো অবস্থাতেই দু'হাত ব্যবহার করা যাবে না।

উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে একথা বলা যায় যে, নামাজের মধ্যে রিং বেজে উঠলে দু'হাত ব্যবহার না করে এক হাতের সাহায্যে মোবাইল পকেটে রেখেই যে কোনো বাটন চেপে রিং বন্ধ করে দিবেন। আর পকেট থেকে মোবাইল বের করার প্রয়োজন হলেও একহাত দ্বারাই করবেন। মোবাইল বের করে পকেটের কাছে রেখে, না দেখে দ্রুত বন্ধ করে আবার পকেটে রেখে দিবেন। মনে রাখবেন, একহাত দ্বারা মোবাইল বন্ধ করতে গিয়ে মোবাইল পকেট থেকে বের করে দেখে দেখে বন্ধ করা যাবে না। কারণ দেখে দেখে বন্ধ করা অবস্থায় কেউ নামাজি ব্যক্তিকে দেখলে সে নামাজে আছে বলে মনে করবে না। ফলে তা আমলে কাসীরের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাওয়ায় নামাজ ভেঙ্গে যাবে।

[খুলাসাতুল ফাতওয়া, খণ্ড : ১ পৃষ্ঠা : ১২৯ # ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ১০৫ # শরহে নববী, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ২০৫ # রদ্দুল মুহতার, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৬২৪, ২৬৪, ২৬৫ # আল বাহর্রু রায়েক, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ১১-১২ # ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৫৬৪ # শরহুল মুনিয়াহ, পৃষ্ঠা : ৪৪৩]


যে বই থেকে নেয়া হয়েছেঃ
• মোবাইল ফোন ব্যবহার : বৈধতার সীমা কতটুকু ?
• মুফীজুল ইসলাম আব্দুল আযীয
• সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান | 
courtesy: Islamhouse.com
 

Tuesday, August 6, 2013

সঠিক সময়ে ফজরের নামাজ আদায়ের কৌশল

সঠিক সময়ে ফজরের নামাজ আদায়ের কৌশল

 

লম্বা সময় ধরেই কিছুটা নিয়মিতভাবে ফজরের নামাজ কাজা আদায় করে আসছিলাম। মানে সঠিক সময়ে আদায় করতে পারছিলাম না। কারন আর কিছুই নয়। ঘুম থেকে উঠতে খুবই আলসেমি লাগতো অথবা ঘুম থেকে উঠতেই পারতাম না। কিন্তু সব সময়ই বুঝতাম যে কাজটা ভালো হচ্ছিলো না। হাজার হলেও ফরজ নামাজ,  সঠিক সময়ে নামাজ আদায় করাটাও আরেকটা ফরজ।

কিন্তু আমি দেখছি যে, সঠিক সময় ফজর নামাজ আদায় করাটাও কঠিন কাজ নয়। জানিনা ব্লগে এভাবে লেখাটা উচিত হচ্ছে কিনা। কিন্তু যেহেতু আমি পারছি তাই ভাবলাম কেন না আরো অনেকেই জানুক। যদিও নামাজ আদায় করছি এই কথাটা ঢাকঢোল পিটিয়ে বলা অবশ্যই কোন উচিত কাজ নয়। তবে আমার নিয়ত সেটা নয় আদৌ, নিশ্চই আল্লাহ্‌ সকল গোপন বিষয়েও অবগত।
যাই হোক, যা করলে সঠিক সময়ে নামাজ আদায় করতে পারার সম্ভাবনা রয়েছে।
১) মনবল দৃঢ় করতে হবে, “আমি অবশ্যই ফজরের নামাজ আদায় করবো।”
২) দেরি করে ঘুমাতে যাওয়া যাবে না। আমরা অনেক সময় জরুরী কাজ করতে করতে দেরি করে ফেলি আর হয়তো রাত ২টা ৩টায় ঘুমাতে যাই। এই অবস্থা হলে ফজরের সময় ঘুম থেকে উঠা অনেকটাই অসম্ভব হয়ে যায়।
৩) এলার্ম সিষ্টেমে রিমাইন্ডার সেট করে দেখতে পারেন। তবে আমার মতে দেরি করে না ঘুমালে ফজরের সময় উঠাটা সহজ হয়। আমি দেখেছি দেরিতে ঘুমালে অনেক সময় এলার্মটাও শুনতে পাইনা।
৪) যদি ফজরে উঠতেই পারেন তবে দেখবেন কিছু হালকা পাতলা কাজ সবার আগেই করে শেষ করতে পারছেন। তারমানে, আগে যে কাজটি দিনের জন্য জমা থাকতো সেটা ভোর বেলাতেই শেষ হয়ে যাবে।
৫) প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হবে। নামাজ আদায় করার পর খুব ঘুম পাবে কিন্তু ঘুম আসবেও না, এমনটা হতে পারে। সেক্ষেত্রে একটু ঘুমিয়ে নিলে মন্দ হয়না। কিন্তু দেখবেন এক সপ্তাহের মাঝেই ঠিক হয়ে যাবে।
৬) যদি এমন হয় যে, তাড়াতাড়ি ঘুমাতে গিয়েও ঘুম আসছে না, তবে একটু শারিরিক পরিশ্রম করে নিতে পারেন। আমি দেখেছি, যদি একটু কঠিন পরিশ্রমের কাজ করি তবে ঘুমাতে গেলেই তাড়াতাড়ি ঘুম আসে। অতো রাতে যদি পরিশ্রমের কাজ না পান তবে একটু exercise করে নিতে পারেন।
৭) যদি এলার্ম শুনতে পান তবে ‘আর একটু ঘুমিয়ে নেই’ এই ভেবে শুয়ে থাকবেন না। কারন আমি দেখেছি ‘আর একটু ঘুমিয়ে নেই’ করতে গিয়েই ফজর নামাজ মিস্‌ করে ফেলেছি।
৮) বাসার অন্য কেউ যদি নিয়মিত ফজরের নামাজ আদায় করে থাকে তবে তাকে বলতে পারেন ডেকে দেবার জন্য। এটা খুবি সহজ পদ্ধতি।
বাস্তব জীবন থেকে দেখলাম, ফজরের নামাজ পড়াটা মোটেও তেমন কঠিন কাজ নয়, শুধু প্রয়োজন ‘ফজরের নামাজ সময়মত পড়বোই পড়বো” – এই দৃঢ় ইচ্ছা মনে পোষণ করা। আর যখন কয়েকবার তা করা সম্ভব হবে তখন নামাজ আদায়কারী নিজেই অবাক হবেন এটা দেখে যে এতে দিনের কি পরিমান বরকত পাওয়া যাচ্ছে! একদিনে অনেক কাজই করা সম্ভব যা সময়ের অভাবে আগে করতে পারিনি! ”দিনগুলো কিভাবে যেন চলে যাচ্ছে, একদম সময়ের বরকত পাচ্ছিনা” – এই কথা তখন হরহামেশা আর দুঃখ করে বলতে হবেনা! শুধু তাইনা, তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে তাড়াতাড়ি উঠার অভ্যাসটা শরীরকে সারাদিন চাঙ্গা রাখে, অন্তত আমার ক্ষেত্রে আমি দেখেছি,আমি খুব চাঙ্গা ফীল করেছি। সারাদিন ক্লান্তিমুক্ত মনে হয়েছে, কাজেকর্মে আগের চেয়ে ভাল মনোযোগ দিতে পারছি। অন্যান্য কাজগুলোও সময়মত সম্পন্ন করতে পারছি, অর্থাৎ সারাদিনটাই ভাল যাচ্ছে!
এখন প্রশ্ন হল, এই দৃঢ় ইচ্ছা টা তৈরি করব কিভাবে?
যে একবার কাজটা practically করতে পেরেছে, সে এর উপকারিতা দেখে নিজ থেকেই উঠার ইচ্ছা ফীল করবে। আর যিনি কখনো তা করেননি তার জন্য আমার কিছু suggestion হল:
(ক) একবার ফীল করুন দেশে এমন বিদ্যুৎ সঙ্কট চলছে আর আপনি অযথা রাত জেগে বিদ্যুৎ অপচয় করছেন! অথচ রাত জেগে যে কাজ আপনি করছেন তা হয়তো ভোরে উঠে সূর্যের আলোতেও করতে পারতেন, যা চোখের জন্যও ভালো।
(খ) একবার চিন্তা করুন, আমরা যদি অযথা বিদ্যুৎ অপচয় করি, তাহলে তার জন্য স্রষ্টার কাছে জবাব্দিহিও করতে হবে ।
(গ) চিন্তা করুন, ফজর এর নামাজ অন্য নামাজ গুলোর মতই ফরজ এবং তা যথা সময়ে আদায় করাটাও ফরজ। কাজেই এতে গাফিলতির জন্য মারাত্মক পরিণতি অপেক্ষা করছে।
(ঘ) চিন্তা করুন আপনি আপনার বাচ্চাদের, কিম্বা ছোট ভাইবোনদের শিখাচ্ছেন – early to bed and early to rise- is the way to be healthy, wealthy and wise– অথচ নিজেই early উঠছেন না, early ঘুমাতে যাচ্ছেন না -এটাকি ঠিক হচ্ছে? আমার ক্ষেত্রে এই চিন্তাটাও আমাকে ভোরে উঠতে এবং ফজর এর নামাজ পড়তে সহায়তা করেছে।
(ঙ) চিন্তা করুন উন্নত বিশ্বের লোকেরা খুব ভোর এ ঘুম থেকে উঠে আর খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরে আর আমরা যারা অনুন্নত বিশ্বের নাগরিক তারা দেরীতে উঠছি আর দেরীতে ঘুমাতে যাচ্ছি — তার মানে এই অভ্যাস আমাদের পিছিয়ে পরার একটা কারন নয় কি?
আরো একটা বিষয় আছে। সারাদিনের বাতাসের গন্ধ আর ফজরের সময়ের বাতাসের গন্ধের মাঝে রয়েছে অনেক পার্থক্য। এমনকি সকাল সাতটা-আটটার বাতাসের গন্ধ আর ফজরের সময়ের গন্ধের মাঝেও আছে বেশ পার্থক্য। সেই অভিজ্ঞতা তো আর ব্লগ পড়ে বা শুনেশুনে হবার নয়, তাই নয় কি? আর বলা যায়না, সারা দিন যান্ত্রীকতার ভীড়ে হয়তো শুনতে পাইনা যে শতশত পাখিরা কিভাবে ডাকাডাকি করে।
তবে হ্যা, উপরে যতো কিছু নিয়ে আলাপ করলাম, হয়তো এতো কিছু আলোচনার প্রয়োজনী নাই শুধু এই কথা দিয়েই যে, আল্লাহ্‌ আমাদের জন্য ফজরের নামাজও ফরজ করেছেন সুতরাং তা সঠিক সময়ে আদায় করতেই হবে; সকাল সকাল কাজকর্ম শেষ হোক বা না হোক, বিদ্যুৎ সাশ্রয় হোক না না হোক, পাখির ডাক শুনতে পাই বা না পাই। বন্ধুরা আপনারা কে কিভাবে সঠিক সময়ে ফজরের নামাজ আদায়ে সক্ষম হলেন মন্তব্য আকারে জানাতে ভুলবেন না প্লীজ্‌।
- লেখাটি শিবলী ও সামিনা মিলে লিখেছেন।