Pages

Saturday, September 28, 2013

নামাজে একাগ্রতা অর্জনের গুরুত্ব ও উপায়

নামাজে একাগ্রতা অর্জনের গুরুত্ব ও উপায়

- আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব

 

ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হ’ল নামাজ। সর্বাবস্থায় আল্লাহর স্মরণকে হৃদয়ে সঞ্চারিত রাখার প্রক্রিয়া হিসাবে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করেছেন। আল্লাহ বলেন- ‘আর তুমি নামাজ কায়েম কর আমাকে স্মরণ করার জন্য’। [ত্বোয়া-হা ২০/১৪]
আর প্রতিটি কাজে সফলতার জন্য মৌলিক শর্ত হল একাগ্রতা ও একনিষ্ঠতা। আর এ বিষয়টি নামাজের ক্ষেত্রে আরো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ইবাদতের প্রকৃত স্বাদ আস্বাদনের জন্য একাগ্রতার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে এই ব্যস্ত যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে একাগ্রচিত্তে নামাজ আদায় করা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। অথচ একাগ্রতাবিহীন নামাজ  শুধুমাত্র দায়সারা ও শারীরিক ব্যায়ামের উপকারিতা ব্যতীত তেমন কিছুই বয়ে আনে না। হৃদয়ে সৃষ্টি করে না প্রভুর একান্ত সান্নিধ্যে কিছু সময় অতিবাহিত করার অনাবিল প্রশান্তি। সঞ্চারিত হয় না নেকী অর্জনের পথে অগ্রগামী হওয়ার এবং যাবতীয় অশ্লীলতা ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকার কোন অনুপ্রেরণা। সার্বিক অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে রাসুল সা.-এর নিম্নোক্ত হাদিসটি একটি কঠিন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই উম্মত হতে সর্বপ্রথম নামাজের একাগ্রতাকে উঠিয়ে নেয়া হবে, এমনকি তুমি তাদের মধ্যে কোন একাগ্রচিত্ত মুসল্লি খুঁজে পাবে না’। [ত্বাবারাণী; ছহিহুল জামে‘ হা/২৫৬৯]
একই বক্তব্য প্রতিধ্বনিত হয়েছে হুযায়ফা রা.-এর নিম্নোক্ত বাণীতে। তিনি বলেন, ‘সর্বপ্রথম তোমরা নামাজে একাগ্রতা হারাবে। অবশেষে হারাবে নামাজ।
অধিকাংশ নামাজ  আদায়কারীর মধ্যে কোনো কল্যাণ অবশিষ্ট থাকবে না। হয়তো মসজিদে প্রবেশ করে একজন বিনয়ী-একাগ্রতা সম্পন্ন নামাজ  আদায়কারীকেও পাওয়া যাবে না’।  [ইবনুল ক্বাইয়ম, মাদারিজুস সালেকীন বৈরূত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, ১৯৯৬), ১/৫১৭ পৃঃ]
বস্তুতঃ খুকূবিহীন নামাজ বান্দাকে অন্যায় ও অশ্লীলতা থেকে দূরে রাখে না। তাইতো আল্লাহ তাআলা একাগ্রচিত্তের অধিকারী মুসল্লিদেরকেই সফল মুমিন বলে আখ্যায়িত করেছেন। বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে নামাজে একাগ্রতার প্রয়োজনীয়তা, ফজিলত এবং একাগ্রতা সৃষ্টির কিছু উপায় সংক্ষেপে আলোচিত হল।
খুশু বা একাগ্রতার পরিচয়
‘খুশু’-এর আভিধানিক অর্থ হ’ল দীনতার সাথে অবনত হওয়া, ধীরস্থির হওয়া ইত্যাদি। ইবনু কাছীর বলেন, খুশু অর্থ- স্থিরতা, ধীরতা, গাম্ভীর্য, বিনয় ও নম্রতা।
ইবনুল ক্বাইয়ম বলেন, খুশু হল হৃদয়কে দীনতা ও বিনয়ের সাথে প্রতিপালকের সম্মুখে উপস্থাপন করা। [মাদারিজুস সালেকিন ১/৫১৬]
প্রত্যেক ইবাদত কবুল হওয়া এবং তার প্রকৃত স্বাদ আস্বাদন করার আবশ্যিক শর্ত হল খুশু। আর শ্রেষ্ঠ ইবাদত নামাজের ক্ষেত্রে এর আবশ্যিকতা যে কত বেশি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তোমরা আল্লাহর সম্মুখে দণ্ডায়মান হও বিনীতভাবে’ [বাকারাহ ২/২৩৮]
তিনি আরো বলেন, ‘ঐ সকল মুমিন সফলকাম, যারা নামাজে বিনয়াবনত’ [মুমিনুন ২৩/১-২]
খুশু বা একাগ্রতার স্থান হৃদয়ের গভীরতম প্রদেশে, কিন্তু এর প্রভাব বিকশিত হয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে। অন্যমনস্ক হওয়ার দরুন আত্মিক জগতে বিঘœ সৃষ্টি হলে বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও তার কুপ্রভাব পড়ে। তাই হৃদয় জগতকে একাগ্রতা ও একনিষ্ঠতায় পরিপূর্ণ করতে সক্ষম হলেই নামাজের প্রকৃত স্বাদ পাওয়া সম্ভব।
নামাজের মধ্যে খুকূ কেবল তারই অর্জিত হবে, যে সবকিছু ত্যাগ করে নিজেকে শুধুমাত্র নামাজের জন্য নিবিষ্ট করে নিবে এবং সবকিছুর ঊর্ধ্বে নামাজকে স্থান দিবে। তখনই নামাজ তার অন্তরকে প্রশান্তিতে ভরে দিবে। রাসুলুল্লাহ সা. বলতেন, ‘নামাজেই আমার চোখের প্রশান্তি রাখা হয়েছে’।  [আহমাদ, মিশকাত হা/৫২৬১, সনদ হাসান]
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে মনোনীত বান্দাদের আলোচনায় ‘খুশু-খুযু’র সাথে নামাজ আদায়কারী নারী-পুরুষের কথা উল্লেখ করেছেন এবং তাদের জন্য নির্ধারিত ক্ষমা ও সুমহান প্রতিদানের ঘোষণা দিয়েছেন [আহযাব ৩৩/৩৫]
‘খুশু’ বান্দার উপর নামাজের এই কঠিন দায়িত্বকে স্বাভাবিক ও প্রশান্তিময় করে তোলে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয়ই তা বিনয়ী-একনিষ্ঠ ব্যতীত অন্যদের উপর অতীব কষ্টকর’ [বাক্বারা ২/৪৫]
বস্তুত যে কোনো ইবাদতের ক্ষেত্রে যখন রাসুল সা.-এর নিম্নোক্ত বাণীর অনুসরণ করা হবে, তখনই তা এক সফল ইবাদতে পরিণত হবে। হৃদয়জগতকে অপার্থিব আলোয় উদ্ভাসিত করবে। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর ইবাদত কর এমনভাবে, যেন তাঁকে তুমি দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও, তবে তিনি যেন তোমাকে দেখছেন’।  [বুখারি হা/৫০; মুসলিম হা/৮; মিশকাত হা/২]
একাগ্রতাপূর্ণ নামাজের ফজিলত
খুশু-খুযু পূর্ণ নামাজ আদায়কারীর মর্যাদা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা পাঁচওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। অতএব যে ভাল করে অজু করবে, সময় মত নামাজ  আদায় করবে এবং রুকু-সিজদা সঠিকভাবে আদায় করবে, আল্লাহর দায়িত্ব তাকে ক্ষমা করে দেওয়া। আর যে এমনটি করবে না, তার প্রতি আল্লাহর কোন দায়িত্ব নেই। তিনি শাস্তিও দিতে পারেন, ক্ষমাও করতে পারেন’।  [আহমাদ, আবুদাউদ হা/৪২৫; মিশকাত হা/৫৭০]
রাসুল সা. আরো বলেন, ‘যে সুন্দরভাবে অজু করে, অতঃপর মন ও শরীর একত্র করে (একাগ্রতার সাথে) দু’রাকআত নামাজ আদায় করে, (অন্য বর্ণনায় এসেছে- যে নামাজে ওয়াসওয়াসা স্থান পায় না) তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়)।  [নাসাঈ হা/১৫১; বুখারি হা/১৯৩৪; মিশকাত হা/২৮৭]
খুকূ ও একাগ্রতা অর্জনের উপায়
নামাজে একাগ্রতা অর্জনের উপায়গুলি দু’ভাগে বিভক্ত-
(১) একাগ্রতা সৃষ্টি ও তা শক্তিশালীকরণের পদ্ধতি গ্রহণ করা।
(২) ‘খুশু’ ও ‘খুজু’তে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী বিষয়গুলো পরিহার করা।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, দু’টি বস্তু ‘খুশু’র জন্য সহায়ক। প্রথমটি হ’ল মুসল্লি যা বলবে, যা করবে; তা অনুধাবন করবে। স্বীয় তেলাওয়াত ও দোয়াসমূহ গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করবে। সর্বদা হৃদয়ে জাগরুক রাখবে যে, সে আল্লাহর সম্মুখে প্রার্থনারত এবং তিনি তাকে দেখছেন। কেননা নামাজরত অবস্থায় মুসল্লি আল্লাহর সাথেই কথপোকথন করে। হাদিসে জিবরিলে ইহসানের সংজ্ঞায় এসেছে, ‘আল্লাহর ইবাদত কর এমনভাবে, যেন তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। যদি তুমি দেখতে না পাও, তবে তিনি তোমাকে দেখছেন’।  [বুখারি হা/৫০; মুসলিম হা/৮; মিশকাত হা/২]
এভাবে মুসল্লি যতই নামাজের স্বাদ আস্বাদন করবে, ততই নামাজের প্রতি তার আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে। এটা নির্ভর করে তার ঈমানি শক্তির উপর। আর তা বৃদ্ধি করার অনেক উপকরণ রয়েছে।
রাসুল সা. বলতেন, ‘আমার জন্য প্রিয়তর করা হয়েছে নারীও সুগন্ধি। আর নামাজকে করা হয়েছে আমার চোখের প্রশান্তি’।  [আহমাদ, নাসাঈ; মিশকাত হা/৫২৬১]
অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল সা. বেলাল রা.-কে উদ্দেশ্য করে বলছেন,  ‘হে বেলাল, নামাজের একামত দাও, আমাদেরকে প্রশান্তি দাও’।  [আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১২৫৩]
দ্বিতীয়টি হ’ল প্রতিবন্ধকতা দূর করা। অন্তরের একাগ্রতা বিনষ্টকারী বস্তু ও অপ্রয়োজনীয় চিন্তা-ভাবনা পরিহার করা এবং নামাজের মৌলিক উদ্দেশ্য ব্যাহতকারী সকল আকর্ষণীয় বস্তুকে পরিত্যাগ করা।
একাগ্রতা সৃষ্টি ও শক্তিশালী করণের উপায়সমূহ
(১) নামাজের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ
নামাজে একাগ্রতা সৃষ্টির জন্য প্রথমতঃ নিজেকে নামাজের জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে। যেমন মুওয়াজ্জিন আযান দিলে তার জওয়াব দেওয়া, আযান শেষে নির্দিষ্ট দো‘আ পড়া, অতঃপর বিসমিল্লাহ বলে সঠিকভাবে ওযূ করা, ওযূর পরে দোয়া পড়া ইত্যাদি। মুখ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য মিসওয়াকের প্রতি যতœশীল হওয়া আবশ্যক। রাসুল সা. বলেছেন, ‘বান্দা যখন নামাজের জন্য দণ্ডায়মান হয় এবং তেলাওয়াত করে, ফেরেশতা তার পিছনে দাঁড়িয়ে তেলাওয়াত শুনতে থাকে এবং শুনতে শুনতে তার নিকটবর্তী হয়। অবশেষে সে তার মুখকে বান্দার মুখের সাথে লাগিয়ে দেয়। ফলে সে যা কিছু তেলাওয়াত করে, তা ফেরেশতার মুখগহবরেই পতিত হয়। অতএব, ‘তোমরা (নামাজে) কুরআন তেলাওয়াতের জন্য মুখকে পরিচ্ছন্ন কর’। [বায়হাকি, বাযযার;  সিলসিলা ছহিহাহ হা/১২১৩]
অতঃপর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সুগন্ধিযুক্ত পোষাক পরিধান করে নামাজের জন্য বের হবে। যা মুসল্লির হৃদয়ে অনাবিল প্রশান্তি বয়ে আনে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা নামাজের সময় সুন্দর পোষাক পরিধান কর’ [আ‘রাফ ৭/৩১]
এছাড়া নামাজের স্থানকে পবিত্র করা, ধীর-স্থিরভাবে মসজিদে গমন, পায়ে পা, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাতার সোজা করে দাঁড়ানো প্রভৃতি বিষয়গুলিও নামাজে একাগ্রতা সৃষ্টির জন্য কার্যকর।
(২) ধীর-স্থিরতা অবলম্বন করা
নামাজে একাগ্রতা আনার জন্য ধীর-স্থিরতা অবলম্বন করা আবশ্যক। রাসুল সা. প্রত্যেক অঙ্গ নিজ নিজ স্থানে ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতেন।  [আবুদাঊদ, ছিফাতু সালাতিন্নাবি ১/১৩৪]
নামাজে ভুলকারী ব্যক্তিকে তিনি ধীরে-সুস্থে নামাজ আদায় করার শিক্ষা দিয়ে বলেন, ‘এভাবে আদায় না করলে তোমাদের কারো নামাজ শুদ্ধ হবে না’।  [আবুদাঊদ হা/৮৫৮, সনদ ছহীহ]
আবু কাতাদা রা. হ’তে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেছেন, ‘নিশৃষ্টতম চোর হ’ল সেই ব্যক্তি, যে নামাজে চুরি করে। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! নামাজে কিভাবে চুরি করে?  তিনি বললেন, ‘যে রুকু-সিজদা পূর্ণভাবে আদায় করে না’।  [আহমাদ ;:মিশকাত হা/৮৮৫, সনদ ছসহি]
রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি পূর্ণভাবে রুকূ করে না এবং সিজদাতে শুধু ঠোকর দেয়, সে ঐ ক্ষুধার্ত ব্যক্তির ন্যায়, যে দু’তিনটি খেজুর খেল, কিন্তু পরিতৃপ্ত হল না’।  [তাবারানি; সহিহুল জামে হা/৫৪৯২, সনদ হাসান]
এছাড়া রাসুল সা. সংক্ষেপে নামাজ আদায় করতে নিষেধ করেছেন। সাথে সাথে তিনি দীর্ঘ নামাজকে সর্বোত্তম নামাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। [মুসলিম হা/৭৫৬; মিশকাত হা/৮০০]
ধীর-স্থিরতা ব্যতীত একাগ্রতাপূর্ণ সফল নামাজ আদায় করা অসম্ভব। কাকের ন্যায় ঠোকর দিয়ে আদায়শৃত নামাজে একদিকে যেমন একাগ্রতা থাকে না, অন্যদিকে তেমনি নেকী অর্জনও সুদূর পরাহত হয়ে পড়ে।
(৩) নামাজে মৃত্যুকে স্মরণ করা
রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘তুমি নামাজে মৃত্যুকে স্মরণ কর। কারণ যে ব্যক্তি নামাজে মৃত্যুকে স্মরণ করবে, তার নামাজ যথার্থ সুন্দর হবে। আর তুমি সেই ব্যক্তির ন্যায় নামাজ আদায় কর, যে জীবনে শেষবারের মত নামাজ আদায় করে নিচ্ছে’। [দায়লামী; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৪২১]
রাসুল সা.-এর নিকটে জনৈক ব্যক্তি সংক্ষিপ্ত উপদেশ কামনা করলে তিনি তাকে বললেন, ‘যখন তুমি নামাজে দন্ডায়মান হবে, তখন এমনভাবে নামাজ আদায় কর, যেন এটিই তোমার জীবনের শেষ নামাজ’। [ইবনু মাজাহ; মিশকাত হা/৫২২৬, সনদ হাসান]
মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু তার সময়-ক্ষণ অনিশ্চিত। তাই বান্দাকে তার প্রতিটি নামাজকেই ‘বিদায়ী নামাজ’ হিসাবে আদায় করতে হবে। মনে করতে হবে যে, এটাই তার জীবনের শেষ নামাজ; প্রভুর সাথে একান্ত আলাপের শেষ সুযোগ। সর্বদা এ চিন্তা অন্তরে জাগরূক রাখতে পারলে তার প্রতিটি নামাজই এক বিশেষ নামাজে পরিণত হবে।
(৪) পঠিত আয়াত ও দো‘আ সমূহ গভীরভাবে অনুধাবন করা
নামাজে পঠিত প্রতিটি আয়াত ও দো‘আ গভীর মনোযোগে অর্থ বুঝে পড়তে হবে এবং শুনতে হবে। বিশেষত পঠিত দো‘আ সমূহের অর্থ একান্তভাবেই জানা আবশ্যক। কুরআনের আয়াত সমূহ শ্রবণে যেসব বান্দা প্রভাবিত হয়, তাদের প্রশংসা করে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যারা তাদের রবের আয়াতসমূহ স্মরণ করিয়ে দিলে বধির ও অন্ধদের মত পড়ে থাকে না’ [ফুরকান ২৫/৭৩]
এতদ্ব্যতীত শিক্ষিত ব্যক্তিদের জন্য কুরআনের তাফসীর পাঠ করা উচিত। খ্যাতনামা মুফাসসির ইবনু জারীর তাবারি বলেন, ‘আমি আশ্চর্যান্বিত হই সেই সব পাঠককে দেখে, যারা কুরআন পাঠ করে অথচ তার মর্ম জানে না। সে কিভাবে এর স্বাদ পাবে’?  [মাহহুদ শাকের কর্তৃক তাফসিরে তাবারানি ভূমিকা ১/১০]
একটি আয়াত বার বার পাঠ করা এবং সে সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করাও নামাজে একাগ্রতা সৃষ্টির জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আবু যর গিফারী রা. হ’তে বর্ণিত, রাসুল সা. একদিন তাহাজ্জুদ নামাজে কেবলমাত্র ‘যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করেন তবে তারাতো আপনারই বান্দা, আর তাদেরকে যদি ক্ষমা করেন, তবে নিশ্চয়ই আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’ [মায়েদাহ ৫/১১৮] -এই আয়াতটি পড়তে পড়তেই রাত শেষ করেছিলেন। [নাসাঈ, ইবনু মাজাহ; মিশকাত হা/১২০৫, সনদ ছহীহ]
হুযায়ফা রা. হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,
‘আমি রাসুলুল্লাহ সা.-এর সাথে কোন এক রাতে নামাজ পড়েছিলাম। লক্ষ্য করলাম, তিনি একটি একটি করে আয়াত পড়ছিলেন। যখন আল্লাহর প্রশংসামূলক কোন আয়াত আসত, আল্লাহর প্রশংসা করতেন। যখন প্রার্থনা করার আয়াত আসত, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন। যখন আশ্রয় চাওয়ার আয়াত আসত, আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইতেন’।  [মুসলিম হা/৭৭২]
নামাজে  আয়াত  সমূহ  অনুধাবন  করা  ও তার ফলাফলের বাস্তবতা জানার জন্য নিম্নোক্ত হাদীছটিও প্রণিধানযোগ্য।
আতা রা. বলেন, একদা আমি ও উবাইদ ইবনে ওমায়ের রা. আয়েশা রা.-এর নিকটে গমন করি। উবাইদ আয়েশাকে অনুরোধ করলেন, আপনি আমাদেরকে রাসুল সা.-এর একটি অতি আশ্চর্যজনক ঘটনা শুনান। আয়েশা রা. এ কথা শুনে কেঁদে ফেললেন। অতঃপর বললেন, এক রাতে উঠে রাসুল সা. আমাকে বললেন, আয়েশা তুমি আমাকে ছাড়, আমি প্রভুর ইবাদতে লিপ্ত হই। আমি বললাম, আল্লাহর কসম, আমি আপনার নৈকট্য যেমন পসন্দ করি এবং আপনার পসন্দের জিনিসও তেমনি পসন্দ করি। আয়েশা রা. বলেন, রাসুল সা. উঠে ওযূ করলেন এবং নামাজে দাঁড়ালেন। অতঃপর কাঁধে আরম্ভ করলেন। কাঁদতে কাঁদতে তার বক্ষ ভিজে গেল। এমনকি এক পর্যায়ে (পায়ের নীচের) মাটি পর্যন্ত ভিজে গেল। বেলাল তাঁকে (ফজরের) নামাজের সংবাদ দিতে এসে দেখেন তিনি কাঁদছেন। বেলাল বললেন, হে আল্লাহর রাসুল সা.! আপনি কাঁদছেন, অথচ আল্লাহ আপনার পূর্বের ও পরবর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন? রাসুল সা. বললেন, হে বেলাল! আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হব না? আজ রাতে আমার উপর কয়েকটি আয়াত (আলেইমরান ১৯০-২০০) নাযিল হয়েছে। ‘যে ব্যক্তি এগুলো পড়বে, কিন্তু চিন্তা-ভাবনা করবে না, সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’। [ছহীহ ইবনু হিববান; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬৮]
(৫) প্রতিটি আয়াত তেলাওয়াতের পর ওয়াকফ করা
এ পদ্ধতি একদিকে যেমন পঠিত আয়াত সম্পর্কে চিন্তা ও উপলব্ধি করতে সহায়ক হয়, অন্যদিকে তেমনি তা একাগ্রতা সৃষ্টির জন্য অত্যন্ত কার্যকর। রাসুল সা.-এর কুরআন তেলাওয়াতের ধরন ছিল এরূপ। তিনি প্রতিটি আয়াতের শেষে ওয়াকফ করতেন। [আবুদাঊদ হা/৪০০১, সনদ ছহীহ]
(৬) মধুর স্বরে স্থিরতার সাথে তেলাওয়াত করা
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘স্পষ্টভাবে ধীরে ধীরে কুরআন তেলাওয়াত কর’ [মুযযাম্মিল ৪] রাসুলুল্লাহ সা. প্রতিটি সূরা তারতীল সহকারে তেলাওয়াত করতেন। [মুসলিম হা/৭৩৩, তিরমিযী হা/৩৭৩]
মধুর স্বরে ধীরগতির পড়া খুকূ বা একাগ্রতা সৃষ্টিতে যেমন সহায়ক ভূমিকা পালন করে, তাড়াহুড়ার সাথে দ্রুতগতির পড়া তেমনি একাগ্রতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। রাসুল সা. বলেন,
‘তোমরা সুমধুর স্বরে কুরআন তেলাওয়াত কর। কারণ সুন্দর আওয়াজ কুরআনের সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি করে’। [দারেমী; মিশকাত হা/২২০৮; ছহীহাহ হা/৭৭১]
তবে এখানে সৌন্দর্যের অর্থ গভীর ভাবাবেগ এবং আল্লাহভীতি সহকারে সুন্দরভাবে তেলাওয়াত করা। যেমন রাসুল সা. অন্য হাদীছে বলেন,
‘সবচেয়ে সুন্দর আওয়াজে কুরআন তেলাওয়াতকারী ঐ ব্যক্তি, যার তেলাওয়াত শুনে তোমার মনে হবে যে, সে আল্লাহকে ভয় করছে’।  [ইবনু মাজাহ হা/১৩৩৯, সনদ ছহীহ]
(৭) আল্লাহ বান্দার ডাকে সাড়া দিচ্ছেন একথা স্মরণ করা
নামাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবটাই মূলত মহান প্রতিপালকের কাছে বান্দার একান্ত প্রার্থনা। তাই মুসল্লিকে সর্বদা মনে করতে হবে যে, আল্লাহ তার প্রতিটি প্রার্থনায় সাড়া দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে রাসুল সা.-এর নিম্নোক্ত হাদিসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি নামাজ কে আমার এবং আমার বান্দার মাঝে দু’ভাগে ভাগ করেছি। বান্দা আমার কাছে যা কামনা করবে তাই পাবে।
যখন আমার বান্দা বলে, (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি সারা জাহানের মালিক)।
তখন আল্লাহ বলেন, (বান্দা আমার প্রশংসা করল)। যখন বলে, (পরম করুণাময় অসীম দয়াবান) আল্লাহ বলেন, (বান্দা আমার গুণগান করল)। যখন বলে, (বিচার দিবসের মালিক) আল্লাহ বলেন, (বান্দা আমার যথাযথ মর্যাদা দান করল)। যখন বলে, (আমরা কেবলমাত্র আপনারই ইবাদত করি এবং কেবলমাত্র আপনারই সাহায্য প্রার্থনা করি)। আল্লাহ বলেন, (এটি আমার ও আমার বান্দার মাঝে, আর আমার বান্দা যা চাইবে, তাই পাবে)। যখন বলে, (আপনি আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করুন। এমন ব্যক্তিদের পথ, যাদেরকে আপনি পুরস্কৃত করেছেন। তাদের পথ নয়, যারা অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট হয়েছে)। আল্লাহ তাআলা বলেন, (এটা আমার বান্দার জন্য, আর আমার বান্দা যা প্রার্থনা করবে তাই পাবে)।  [মুসলিম হা/৩৯৫; মিশকাত হা/৮২৩]
রাসুল সা. অন্য হাদীছে বলেন, ‘তোমাদের কেউ নামাজে দাঁড়ালে সে মূলত তার প্রভুর সাথে কথোপকথন করে। তাই সে যেন দেখে, কিভাবে সে কথোপকথন করছে’।  [মুস্তাদরাক হাকেম; ছহিহুল জামে‘ হা/১৫৩৮]
উপরোক্ত হাদিস দু’টি স্মরণে থাকলে নামাজে একাগ্রতা বজায় রাখা সহজ হয়ে যায়।
(৮) সিজদার স্থানেই দৃষ্টি নিবন্ধ রাখা
নামাজে একাগ্রতা সৃষ্টির জন্য মুসল্লীকে দৃষ্টি অবনত রাখতে হবে এবং আশেপাশে দৃষ্টি দেওয়া যাবে না। রাসুল সা. নামাজের সময় মস্তক অবনত রাখতেন এবং দৃষ্টি রাখতেন মাটির দিকে। [বায়হাক্বী, হাকেম; আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নবী, পৃঃ ৬৯]
আর যখন তাশাহহুদের জন্য বসবে, তখন শাহাদত আঙ্গুলের প্রতি দৃষ্টি রাখবে। রাসুল সা. যখন তাশাহহুদের জন্য বসতেন, শাহাদত আঙ্গুলের মাধ্যমে কিবলার দিকে ইশারা করতেন এবং সেদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতেন। [ইবনে হিববান হা/১৯৪৭; ইবনে খুযায়মা হা/৭১৯, সনদ ছহীহ]
(৯) ভিন্ন ভিন্ন সূরা ও দো‘আ সমূহ পাঠ করা
নামাজে সবসময় একই সূরা ও একই দোআ না পড়ে, বিভিন্ন সূরা ও হাদিছে বর্ণিত বিভিন্ন দো‘আ পাঠ করলে, এর দ্বারা নতুন নতুন প্রার্থনা ও ভাবাবেগের সৃষ্টি হয়। এজন্য মুসল্লীকে অধিক সংখ্যক দো‘আ এবং কুরআনের আয়াত মুখস্থ করা জরূরী।
(১০) আয়াতে তেলাওয়াতের সিজদা থাকলে সিজদা করা
সিজদায়ে তেলাওয়াত নামাজে একদিকে যেমন একাগ্রতা বৃদ্ধি করে, অন্যদিকে শয়তানকে দূরে সরিয়ে দেয়। আবু হুরায়রা রা. হ’তে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেন, বনূ আদম যখন তেলাওয়াত শেষে সিজদা করে, শয়তান তখন কাঁদতে কাঁদতে দূরে সরে যায়। আর বলে, আফসোস! আদম সন্তান সিজদার নির্দেশ পেয়ে সিজদা করেছে- তার জন্য জান্নাত। আর আমি সিজদার নির্দেশ পেয়ে অমান্য করেছি- আমার জন্য জাহান্নাম’। [মুসলিম হা/৮১; মিশকাত হা/৮৯৫]
(১১) শয়তান হ’তে আল্লাহর নিকট পানাহ চাওয়া
শয়তান মানুষের চিরশত্র“। যার প্রধান কাজই হ’ল ইবাদতে বান্দার একাগ্রতা নষ্ট করা এবং এতে সন্দেহ সৃষ্টি করা।
একদিন ওছমান বিন আবুল ‘আছ রা. রাসুল সা.-কে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! ‘শয়তান আমার এবং আমার নামাজ ও ক্বিরাআতের মাঝে প্রতিবন্ধকতা এবং নামাজে সন্দেহ সৃষ্টি করে। রাসুল সা. বললেন,  ‘এ শয়তানটিকে ‘খিনযাব’ বলা হয়। যখন তুমি এর প্ররোচনা বুঝতে পারবে, আল্লাহর কাছে পানাহ চাইবে এবং বাম দিকে তিনবার থুক মারবে। তিনি বলেন, আমি এমনটি করেছি, আল্লাহ তাআলা আমার থেকে শয়তানের ওয়াসওয়াসা দূর করে দিয়েছেন’। [মুসলিম হা/২২০৩; মিশকাত হা/৭৭]
রাসুল সা. বলেন, ‘তোমাদের কেউ নামাজে দাঁড়ালে শয়তান ভুলভ্রান্তি ও সন্দেহ সৃষ্টির জন্য নিকটবর্তী হয়, ফলে এক পর্যায়ে সে রাকআত সংখ্যা ভুলে যায়। কারো এমন হলে বসা অবস্থায় দু’টি সিজদা করে নিবে’। [বুখারি হা/১২৩২]
(১২) একাগ্রতার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জানা
রাসুল সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজের সময় হলে সুন্দরভাবে ওযূ করে এবং একাগ্রতার সাথে সুন্দরভাবে রুকূ-সিজদা করে নামাজ  আদায় করে, তার এ নামাজ  পূর্বের সকল গুনাহের কাফফারা হয়ে যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে কোন কবিরা গুনাহে লিপ্ত হয়। আর এ সুযোগ তার সারা জীবনের জন্য’। [মুসলিম হা/২২৮; মিশকাত হা/২৮৬]
জানা আবশ্যক যে, একাগ্রতা ও খুকূর পরিমাণ অনুপাতে নামাজে ছওয়াব অর্জিত হয়। রাসুল সা. বলেন,
‘মুসল্লী নামাজ  আদায় করে, কেউ পায় দশভাগ নেকী, কেউ নয়ভাগ, আটভাগ, সাতভাগ, ছয়ভাগ, পাঁচভাগ, চারভাগ, তিনভাগ আবার কেউ অর্ধেক নেকী অর্জন করে’। [আহমাদ হা/১৮৯১৪; ছহীহুল জামে‘ হা/১৬২৬]
(১৩) নামাজের পরে বর্ণিত দো‘আসমূহ ও নফল নামাজ গুলি আদায় করা
নামাজ  পরবর্তী মাসনূন দো‘আ সমূহ পাঠ এবং সুন্নাতে রাতেবা সমূহ আদায় করলে নামাজের মধ্যে যে একাগ্রতা, বরকত ও  খুকূ অর্জিত হয়, পরর্তীতে তা বিদ্যমান থাকে। সেকারণ সম্পাদিত ইবাদতের কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য পরবর্তী ইবাদতগুলি অতীব গুরুত্ববহ। তাই নামাজের পরে মুসল্লী মাসনূন দো‘আগুলি পাঠ করবে। অতঃপর সারাদিনে মোট ১২ অথবা ১০ রাক‘আত সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাসহ বেশি বেশি নফল নামাজ  আদায় করার চেষ্টা করবে। কারণ নফল নামাজ  দ্বারা ফরযের ত্র“টি-বিচ্যুতি মোচন করা হয়। [আবুদাঊদ হা/৮৬৪; তিরমিজি হা/৪১৩; মিশকাত হা/১৩৩০, সনদ ছহীহ]
(১৪) বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা
অধিক কুরআন তেলাওয়াত হৃদয় জগতে সদাসর্বদা দ্বীনি চেতনা জাগরূক রাখে। সাথে সাথে মনের গভীরে এক ধরনের এলাহি প্রশান্তির আবহ সৃষ্টি করে। যা নামাজের একাগ্রতারজন্য একান্ত প্রয়োজন। তাই মুসল্লিীকে একাগ্রতা সৃষ্টির জন্য বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াতে অভ্যস্ত হ’তে হবে।
উপরোক্ত আলোচনায় একাগ্রতা সৃষ্টির উপায় সমূহ স্পষ্ট করা হয়েছে। আশা করি উল্লিখিত বিষয়গুরো খেয়ালের সাথে মনের করে নামায আদায় করলে রাসূলের ঘোষিত নামাযের দশ ভাগের দশ ভাগ সওয়াবই আমরা পাব ইনশাআল্লা। আল্লাহ তাআলা আমাদের খুশুখুযুর সাথে নামায আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

Friday, September 27, 2013

নামাযের ব্যবহারিক গুরুত্ব

নামাযের ব্যবহারিক গুরুত্ব
 
প্রফেসর তহুর আহমদ হিলালী : একজন ব্যক্তির মুসলমান দাবিতে সে যে সত্যবাদী তার প্রমাণ হলো নামাযের জামাতে উপস্থিত হওয়া। রাসূল (সাঃ)-এর সময়ে কোন ব্যক্তি কয়েক দিন জামাতে অনুপস্থিত থাকলেই সাহাবারা (রাঃ) বলে বসতেন, সে মুনাফিক হয়ে গেছে। এই জন্য মুনাফিকরা মুসলমান হিসাবে পরিচয় দানের জন্য বাধ্য হয়ে জামাতে শরিক হতো। মুনাফিকদের সম্পর্কে সূরা আল মাউনে বলা হয়েছে, ‘তারা নামাযে অবহেলা করে, শৈথিল্য প্রদর্শন করে এবং লোক দেখানো কাজ করে'। রাসূল (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর যুগে নামায ত্যাগকারী লোকদের মুসলমান পরিচয় দানের কোন সুযোগ ছিল না। আল্লাহপাক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নামায নিঃসন্দেহে কঠিন কাজ, কিন্তু কঠিন নয় তাদের জন্য যারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের ভয় রাখে'-সূরা আল বাকারা। তিনি আরো বলেন, ‘জাহান্নামীদের জিজ্ঞেস করা হবে, কোন জিনিস তোমাদেরকে জাহান্নামে নিয়ে এলো?-তারা বলবে, আমরা নামাযী লোকদের মধ্যে গণ্য ছিলাম না'- সূরা আল মুদ্দাস&&সর। এতে বোঝা যায়, নামায না পড়া অর্থ আখিরাতকে অবিশ্বাস এবং জাহান্নামে যাওয়ার উপযুক্ত হওয়া। হাদীসে স্পষ্ট বলা হয়েছে কাফির ও মুসলমানের মধ্যে পার্থক্যকারী বিষয় হলো নামায। হাদীসের ভাষ্য মতে নামায ত্যাগকারী ব্যক্তি মূলত মুসলমান নয় কাফের।
মুসলমান হওয়ার ক্ষেত্রে নামাযের গুরুত্ব আমরা উপলব্ধি করলাম। এত গুরুত্বের কারণ বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন নেই। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ)-এর জোরালো বক্তব্যই গুরুত্ব উপলব্ধির জন্য যথেষ্ট। তারপরও আমাদের আত্মপোলব্ধির জন্য নামাযের অসংখ্য ফায়দার মধ্যে ২/১টা নিয়ে আমরা আলোচনা করবো। আল্লাহপাক নামাযকে জামাতের সাথেই ফরজ করেছেন। ভাষাও ব্যবহার করেছেন বহুবচনের। তোমরা নামায আদায় কর বা রুকুকারীগণের সাথে রুকু কর। আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-এর আমলও ছিল তাই। তিনি মদীনায় হিজরত করে নিজের বাড়ীঘরের কথা চিন্তা না করে প্রথমেই একটি মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং সেই মসজিদে সাহাবায়ে কেরাম পাঁচ ওয়াক্ত নামায রাসূল (সাঃ)-এর ইমামতিতে আদায় করেন। সেই মসজিদে একজন অন্ধ ব্যক্তিকেও জামাতে না আসার সুযোগ দেয়া হয়নি। বরং জিজ্ঞাসা করা হয়েছে-তুমি কি আযান শুনতে পাও? তিনি বলেছেন-হ্যাঁ; তখন বলা হয়েছে তাহলে তোমাকে আসতে হবে। রহমাতুল্লিল আলামিন বলেছেন, ‘আযান শুনে যারা ঘরে বসে থাকবে আমার ইচ্ছা হয় তাদের ঘরগুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিই-দিই না শুধু এ কারণে যে সেখানে নারী ও শিশু রয়েছে'। হযরত আলী (রাঃ) বলেন, ‘মসজিদের প্রতিবেশীদের নামায মসজিদেই আদায় করতে হবে'। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল-মসজিদের প্রতিবেশী কারা? তিনি জবাবে বলেছিলেন যারাই আযান শুনতে পায়। এ ছাড়া সাহাবায়ে কেরাম দুনিয়ার যেখানেই ছড়িয়ে পড়েছেন সেখানেই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। মসজিদ মূলত মুসলমানদের সমাবেশস্থল, তাদের কম্যুনিটি সেন্টার, শক্তিকেন্দ্র। আল্লাহপাক চান মুসলমানরা সংঘবদ্ধ জীবন-যাপন করুক। সংঘবদ্ধতা ছাড়া শয়তানের মোকাবেলায় টিকে থাকা বা তাকে আল্লাহর জমীনে প্রতিনিধি হিসাবে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তা পালন সম্ভব নয়। আযান শোনার সাথে সাথে সকল মুসলমান ছুটে আসে আল্লাহর ঘর মসজিদে। না এসে উপায় কি? কি শক্তিশালী আহবান-আল্লাহু আকবর-আল্লাহ সর্বোচ্চ-সবার বড়-তাঁর আহবানের মোকাবেলায় তাঁর কোন দাসের আহবান কি মানা যায়? নামাযের দিকে এস, কল্যাণের দিকে এস। ঐ মুহূর্তে নামাযের চেয়ে কল্যাণকর আর কোন কাজ কি থাকতে পারে? মুসলমানরা মসজিদে উপস্থিত হয়ে এক ইমামের পেছনে কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়ায়। কাতার সোজা করা নামাযের একটি অন্যতম শর্ত। নামাজের এখানে বড় শিক্ষা হলো শৃক্মখলা ও আনুগত্য। মুক্তাদির দায়িত্ব হলো যথাযথভাবে ইমামকে অনুসরণ করা। মহল্লায় পাঁচজন যুবক সপ্তাহে একদিন একটি ক্লাবে উপস্থিত হলে মানুষ তাদেরকে সমীহ করে এবং বলে ওরা সংঘবদ্ধ, ওদের একজন লীডার আছে। অথচ আমরা দৈনিক পাঁচবার একত্র হই এবং লীডারের (ইমামের) আনুগত্যের মহড়া দিই। কিন্তু আমরা নিজেদের মধ্যে সেই শক্তিমত্তা অনুভব করি না। আমরা স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা পালন করি; এ থেকে কোন শিক্ষা নিই না। ইসলামের শিক্ষা হলো নামাযে যার আনুগত্য করা হবে সমাজেও তার আনুগত্য চলবে। আনুগত্যের এই প্রশিক্ষণ ছাড়াও সপ্তাহে একদিন ইমামের বক্তব্য শোনা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং ইমাম সাহেব তাঁর মুক্তাদিদেরকে ভালোর দিকে উদ্বুদ্ধ করবেন এবং তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে সমাজ থেকে অনাচার দূর করবেন। এটা আজ না ইমাম সাহেব উপলব্ধি করেন আর না মুক্তাদি। মানুষকে বক্তব্য শোনানোর জন্য হাজার হাজার টাকা খরচ করেও একত্রিত করা যায় না অথচ আল্লাহপাক কত চমৎকার একটি আযোজন করে দিলেন যেখানে মুক্তাদিদেরকে অত্যত্ম মনোযোগের সাথে ইমামের কথাগুলো শুনতে হয়। পাশে কেউ কথা বললে ভাই, চুপ কর-তাও বলা যায় না। কত ভক্তি-শ্রদ্ধা। শুধু পরিকল্পনা ও জ্ঞানের অভাবে এতবড় সুযোগ আজ মুসলমানরা কাজে লাগাতে পারছে না। ইমাম বা নেতার আনুগত্যের সীমাও আমরা নামাযের মাধ্যমে শিক্ষা লাভ করতে পারি। ইমাম মানুষ, ভুল তাঁরও হতে পারে। সামান্যতেই অনাস্থা আনা কাম্য নয়। তাই শেখানো হয়েছে ইমাম সাহেব যদি সুন্নাত-মুস্তাহাব ভুল করে তা ধর্তব্যের বিষয় নয়, ওয়াজিব ভুল করলে সহু সিজদাহর মাধ্যমে ইমাম সাহেবকে শোধরায়ে নিতে হবে। কিন্তু ফরজ লংঘন করলে নামায পুনরায় আদায় করতে হবে। আমরা লক্ষ্য করি সুন্নাত-মুস্তাহাব নিয়ে আমাদের মধ্যে কত মত-পার্থক্য, দলাদলি, লড়াই-সংগ্রাম। অথচ নামাযের মত ইবাদত সুন্নাত-মুস্তাহাব ছাড়াই সম্পন্ন হয়ে যাচ্ছে। ক্ষুদ্র দলাদলি ও মত-পার্থক্য পরিহার করে আজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় এসেছে। আল্লাহতা'লার আদালতে আমাদেরকে হারাম-হালাল ও ফরজ-ওয়াজিব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। আমাদের ফরজ-ওয়াজিবে ঘাটতি থাকলে সুন্নাত-মুস্তাহাব পরিপূরক হিসাবে কাজে লাগবে এবং আমাদেরকে পূর্ণতায় পৌঁছে দিবে। হালাল-হারাম ও ফরজ-ওয়াজিব সম্পর্কে আমাদের মুসলিম সমাজে সচেতনতার মারাত্মক ঘাটতি। নামাযের মাধ্যমে আমাদের মধ্যে সে সচেতনা আসতে পারে।
আল্লাহপাকের বাণী, ‘আমি জ্বীন ও মানুষকে কেবল আমারই গোলামী (ইবাদত) করার জন্য সৃষ্টি করেছি'। মানুষ আল্লাহপাকের সার্বক্ষণিক গোলাম-সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত এবং সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয়-কোন একটি মুহূর্ত সে আল্লাহর গোলামীর বাইরে নয়। এ উপলব্ধি যাতে মানুষ ভুলে না যায় সেজন্যই মূলত পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ করা হয়েছে। একজন মুসলমানের ঘুম ভাঙে আযানের শব্দে এবং সে তখন আর মালিকের আহবানে স্থির থাকতে পারে না। আল্লাহর ঘরে ছুটে এসে প্রমাণ করে ‘প্রভু-পরোদিগার-আমি তোমারই গোলাম, আমি তোমার ঘরে হাজির'। নানা কর্মব্যস্ততার মধ্যে সকল কাজ পরিহার করে জোহর, আছর, মাগরিব এবং শোয়ার পূর্বে এশার জামাতে হাজিরা দিতে হয়। নামায বারবার আল্লাহর গোলামীর কথা স্মরণ করে দেয় বলে নামাযকে বলা হয় জ্বিক্র। নামাযের মাধ্যমে একজন নামাযী বারবার আল্লাহপাকের নিকট এই প্রতিশ্রুতিই প্রদান করে যে, ‘আমরা কেবল তোমারই গোলামী করি এবং তোমারই নিকট সাহায্য কামনা করি'। এই প্রতিশ্রুতি দান সত্ত্বেও মসজিদ থেকে বের হয়েই একজন নামাযী আল্লাহর নাফরমানি শুরু করে দেয়। আল্লাহর বাণী, ‘সালাত সমাপনান্তে তোমরা রুজির জন্য বেরিয়ে পড় এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর'। আল্লাহর স্মরণের জন্য যেমন নামায আদায় করা হলো ঠিক তেমনি কর্মক্ষেত্রে আল্লাহর বিধি-বিধান পালনের মাধ্যমে তাঁকে আরো বেশি বেশি স্মরণ করতে হবে। মানুষ যাতে সর্বক্ষণ আল্লাহর স্মরণ ও আল্লাহর ভয়ে আল্লাহর আদিষ্ট কাজ সম্পাদন এবং নিষিদ্ধ কাজ পরিহার করে চলতে পারে সে জন্যই মূলত নামায ও রোযার মত বিধান আমাদের প্রতি ফরজ করা হয়েছে। নামাযের জন্য নামায নয়, আবার রোযার জন্যও রোযা নয়। আল্লাহর নিষ্ঠাবান বান্দাহ হিসাবে গড়ে তোলার জন্যই এ সব আনুষ্ঠানিকতা। ইবাদতের মর্ম উপলব্ধি না করায় আজ মুসলমানরা স্রেফ নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত, তাছবীহ পাঠ ও নির্দিষ্ট মাপের পোশাক-পরিচ্ছদকেই কেবল ইবাদত মনে করছে এবং কর্মময় জীবনে আমাদের লেন-দেন, বিচার-আচার, অফিস-আদালত, চাল-চলন, আচার-ব্যবহার ইসলামসম্মত হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে মোটেই গুরুত্ব আরোপ করছে না। বরং মনে করছে কর্মময় জীবনে কিছু গুনাহ হলেও নামায-রোযার মাধ্যমে তা মাফ পেয়ে যাব। অথচ এসবই ভুল। বরং কুরআনের বক্তব্য ‘নামায নিঃসন্দেহে অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখে'। নামায আদায়ের পরও যদি মানুষ পরিশুদ্ধ না হয় সে নামায মূলত মুনাফিকের নামায। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘যে নামায মানুষকে অন্যায় ও দুষ্কর্ম থেকে ক্ষান্ত করে না, সে নামায আল্লাহ ও মানুষের মধ্যে ব্যবধান বাড়িয়ে দেয়'। রোযা প্রসঙ্গেও একই কথা, ‘রোযা রেখেও যে মিথ্যা ছাড়তে পারলো না, সে রোযায় আল্লাহর কোনই প্রয়োজন নেই'। নামাযের মাধ্যমে আল্লাহকে দেয়া প্রতিশ্রুতি বারবার ভঙ্গ করে আমরা আল্লাহর নাফরমানিতে মেতে উঠেছি। অফিস-আদালতে ঘুষ, মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান, ওজনে কম, ভেজাল প্রদান, মিথ্যা কসম, ধোঁকা-প্রতারণা, মানুষের সম্মান হানি এমন কোন অপকর্ম নেই যা আজ মুসলিম নামধারীরা না করছে। এ সবই আল্লাহপাকের নাফরমানি, কবীরা গুনাহ এবং বন্দাহসুলভ আচরণের পরিপন্থি। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে সামাজিক জীবনে দুশমনি মূলত মুনাফিকদেরই কার্য। এ প্রসঙ্গে ইসলামের বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) সাহাবীদেরকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমাদের মধ্যে দরিদ্র কে? সাহাবারা জবাব দিলেন যার টাকা-পয়সা নেই। তিনি বললেন, না- ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে দরিদ্র যে নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি সম্পাদন করার সাথে সাথে মানুষকে কষ্ট দেয়, তার হক নষ্ট করে-সেদিন যার প্রতি জুলুম করা হয়েছে তার পাওনা পরিশোধ করতে হবে তার অর্জিত ছাওয়াব দিয়ে এবং পূরণ না হলে মজলুমের গুনাহ তাকে দিয়ে অপমানের সাথে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে'। সমাজে যে সব কাজ নিন্দনীয় অর্থাৎ যা আমাদের সমাজটাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে তার প্রত্যেকটি সম্পর্কে রাসূল (সাঃ)-এর উক্তি আমরা একটু স্মরণ করি। ঘুষের দাতা ও গ্রহীতা উভয়ই জাহান্নামী; এক দিরহাম সুদ খাওয়া ছত্রিশবার জ্বিনা অপেক্ষা জঘন্য; সকল নেশার দ্রব্য অবৈধ হারাম; গীবত জ্বিনা অপেক্ষা জঘন্য; মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া শিরকের সমতুল্য বড় গুনাহ; মিথ্যা সকল পাপের মা; যার ওয়াদা-প্রতিশ্রুতির ঠিক নেই তার ধর্ম নেই; যে আমানতের খেয়ানত করে তার ঈমান নেই। এভাবে যদি আমরা উল্লেখ করি তাহলে দেখবো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ রকম সকল কাজই হারাম। নামায, রোযা আদায় না করা যেমন কবিরা গুনাহ; এ সব সামাজিক অপরাধ করাও কবিরা গুনাহ। আল্লাহর সাথে সংশ্লিষ্ট হুকুম লংঘন করলে আল্লাহর কাছে মাফ চাইলে পরিত্রাণ সম্ভব, কিন্তু বান্দাহর হক নষ্ট করলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিকট থেকেও ক্ষমা মঞ্জুর করে নিতে হবে। কাজটি বড়ই কঠিন। তাই নামাযে দেয়া প্রতিশ্রুতি আমাদের ব্যবহারিক জীবনে প্রতিপালনের মাধ্যমে আমরা আল্লহর প্রিয়ভাজন বান্দাহ হওয়ার পাশাপাশি সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারি। আল্লাহ আমাদের সেই তাওফিক দান করুন। আমীন।

Saturday, September 21, 2013

ধৈর্য ও নামাজ যাবতীয় সঙ্কটের প্রতিকার

ধৈর্য ও নামাজ যাবতীয় সঙ্কটের প্রতিকার

বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহীম “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন।” (সূরা আল বাকারা, আয়াত ১৫৩)
বন্ধুরা, ভালো আছো আশা করি। আজ তোমাদের সামনে পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে বড় সূরা সূরা আলা বাকারার একটি আয়াত নিয়ে আলোকপাত করছি।
ঈমানদারদেরকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের বিপদ-মুসিবত, আনন্দ-বিনোদন সর্বাবস্থায় ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। মানুষের দুঃখ-কষ্ট, যাবতীয় প্রয়োজন ও সমস্ত সঙ্কটের নিশ্চিত প্রতিকার এ দু’টি বিষয়ের মধ্যেই নিহিত। প্রথমটি সবর বা ধৈর্য। দ্বিতীয়টি নামাজ। সবর অর্থ হলো সংযম অবলম্বন ও নফসের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ লাভ। কুরআন-হাদিসের পরিভাষায় সবরের তিনটি শাখা রয়েছে। ১. আত্মাকে হারাম এবং না-জায়েজ বিষয় থেকে বিরত রাখা, ২. নিজেকে আল্লাহর ইবাদাত ও আনুগত্যে বাধ্য করা এবং ৩. যে কোনো বিপদ ও সঙ্কটে ধৈর্যধারণ করা। আমাদের পড়ালেখায়, পরীক্ষায়, ফলাফল লাভে, ব্যবসায়-বাণিজ্যে, পরিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে সর্বক্ষেত্রে মানুষ যে সব অপ্রত্যাশিত বিষয়ের মুখোমুখি হয় তাকে মোকাবেলা করতে হয় ঠাণ্ডা মাথায় বুঝে শুনে। তবেই কেবল ফলাফলকে নিজের পক্ষে নিয়ে আসা যায়। ধৈর্যের নিজস্ব কিছু সুন্দর ব্যাখ্যা আছেÑ ১. তাড়াহুড়া না করা। নিজের প্রচেষ্টার ত্বরিত ফল লাভের জন্য অস্থির না হওয়া এবং বিলম্ব দেখে হিম্মত হারিয়ে না বসা, ২. তিক্ত স্বভাব, দুর্বল মত ও সঙ্কল্পহীনতার রোগে আক্রান্ত না হওয়া, ৩. বাধা-বিপত্তির বীরোচিত মোকাবেলা করা এবং শান্ত চিত্তে লক্ষ্য অর্জনের পথে যাবতীয় দুঃখ-কষ্ট বরদাশত করা, ৪.  সকল প্রকার ভয়ভীতি ও লোভ-লালসার মোকাবেলায় সঠিক পথে অবিচল থাকা।
মানুষের যাবতীয় সমস্যা ও সঙ্কট দূর করা এবং যাবতীয় প্রয়োজন মেটানোর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পন্থাটি হচ্ছে নামাজ। রাসূল (সা)-এর পবিত্র অভ্যাস ছিল যে, যখনই তিনি কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতেন, তখনই নামাজ পড়তেন। আর আল্লাহতায়ালা সে নামাজের বরকতেই তাঁর যাবতীয় বিপদাপদ দূর করে দিতেন।
বন্ধুরা, আল্লাহ প্রত্যেক মানুষের জন্য দিনে-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। তোমার ছোট ভাই-বোন থাকলে তাদেরকেও এখন থেকে নামাজ শিখতে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। রাতে আগে-ভাগে ঘুমিয়ে পড়ে ফজরে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে অভ্যাস গড়ে তোলো। সকল নামাজ গভীর মনোযোগ দিয়ে আন্তরিকতার সাথে আদায় করলে আল্লাহ আমাদেরকে সকল বিপদ-আপদ থেকে মুক্ত রাখবেন।
আল্লাহ আমাদেরকে বিপদে ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থন করার তাওফিক দিন। আমিন।
গ্রন্থনা : মিজানুর রহমান

Friday, September 20, 2013

নামাজের অবিশ্বাস্য ১১ টি উপকারিতা

নামাজের অবিশ্বাস্য ১১ টি উপকারিতা

আমাদের পবিত্র কুরআনশরীফে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার ব্যাপারে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।আমরা অনেকেই ভাবি নামাজের উপকারিতা বলতে পরকালের শান্তির কথা।আসলে শুধু তাই নয় নামাযে রয়েছে বিশাল উপকার আর এই বিঙ্গান সম্মত এই উপকারের কথা বলা হয়েছে আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে।ইসলামই একমাএ ধম যার সাথে বিঙ্গানের মিল রয়েছে।কেবল মাএ পবিএ কুরআনশরীফের কথা ১০০% এর মধ্যে ৮০% বিঙ্গান প্রমান করতে পেরেছে।আর বাকি ২০%বিঙ্গান বের করতে পারেনি কারন সেটি প্রমান করার মত প্রযুক্তি এখনো পৃথিবীতে আসেনি।নামাজের মধ্যে যে কি পরিমান বিঙ্গান লুকায়িত আছে তা নিম্ন বননা করা হলঃ ১. নামাজে যখন সিজদা করা হয় তখন আমাদের মস্তিস্কে রক্ত দ্রুত প্রবাহিত হয়।ফলে আমাদের সৃতি শক্তি অনেক বৃদ্ধি পায়।২. নামাজের যখন আমরা দাড়াই তখন আমাদের চোখ জানামাজের সামনের ঠিক একটি কেন্দ্রে স্থির অবস্থানে থাকে ফলে আমাদের মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। ৩. নামাজের মাধ্যমের আমাদের শরীরের একটি ব্যায়াম সাধিত হয়।এটি এমন একটি ব্যায়াম যা ছোট বড় সবাই করতে পারে। ৪. নামাজের মাধ্যমের আমাদের মনের অসাধারন পরিবতন আসে। ৫. নামাজ সকল মানুষের দেহের কাঠামো বজায় রাখে।ফলে শারীরিক বিকলঙ্গতা লোপ পায়। ৬. নামাজ মানুষের ত্বক পরিষ্কার রাখে যেমন ওজুর সময় আমাদের দেহের মূল্যবান অংশগুলো পরিষ্কার করা হয় এর ফলে বিভিন্ন প্রকার জীবানু হতে আমরা সুরক্ষিত থাকি। ৭. নামাজে ওজুর সময় মুখমন্ডল ৩বার ধৌত করার ফল আমাদের মুখের ত্বক উজ্জল হয় এবং মুখের দাগ কম দেখা যায়। ৮. ওজুর সময় মুখমন্ডল যেভাবে পরিস্কার করা হয় তাতে আমাদের মুখে একপ্রকার মেসেস তৈরি হয় ফলে আমাদের মুখের রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং বলিরেখা কমে য়ায। ৯. কিশোর বয়সে নামাজ আদায় করলে মন পবিএ থাকে এর ফলে নানা প্রকার অসামাজিক কাজ সে বিরত থাকে। ১০. নামাজ আদায় করলে মানুষের জীবনি শক্তি বৃদ্ধি পায়। ১১. কেবল মাএ নামাজের মাধ্যমেই চোখের নিয়ম মত যত্ন নেওয়া হয় ফলে অধিকাংশ নামাজ আদায় কারী মানুষের দৃষ্টি শক্তি বজায় থাকে।

Thursday, September 19, 2013

কিছু রোগের জন্য নামাজ ব্যাতিত কোন প্রেসক্রিপশান নেই

 কিছু রোগের জন্য নামাজ ব্যাতিত কোন প্রেসক্রিপশান নেই

সালাত হার্ট এ্যাটাক, প্যারালাইসিস, ডায়াবেটিস, মেলিটাস ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হার্টের রোগীদের প্রতিদিন বাধ্যতামূলকভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা উচিত, যেমনিভাবে তারা তাদের ডাক্তারদের নিকট খারাপ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য অনুমতি লাভ করে থাকেন’
নামাজ একটি উত্তম ইসলামী ব্যায়াম, যা মানুষকে সব সময় সতেজ রাখে, অলসতা এবং অবসাদগ্রস্ততাকে শরীরে বাড়তে দেয় না। অন্যসব ধর্মের মধ্যে এমন সামগ্রিক ইবাদত আর নেই যা আদায়ের সময় মানুষের সকল অঙ্গ নড়াচড়া ও শক্তিশালী হয়। নামাজীর জন্য এটা একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য যে, এটা একান্তই সামগ্রিক ব্যায়াম যার প্রভাব মানবের সকল অঙ্গগুলোতে পড়ে এবং সামগ্রিক মানব অঙ্গগুলোতে নড়াচড়া ও শক্তি সৃষ্টি হয় এবং স্বাস্থ্য অটুট থাকে।

তুরস্কের ডাক্তার হুলুক নূর বাকী নামাজের আত্মিক দিকের ওপর অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন, কিন্তু তিনিও এর দৈহিক উপকারিতার দিকে দৃষ্টি দেননি। এভাবে তিনি লিখেছেন—It today even materialist acknowledge that there can be no prescription other than prayer for the relief of joints.‘আজ বস্তুবাদীরাও স্বীকার করে যে, জোড়ার ব্যথা থেকে মুক্তির জন্য আজ নামাজ ব্যতিত আর কোনো ব্যবস্থাপত্র নেই।’ ক্যামিস্ট্রির ব্যবস্থাপত্র :নামাজের ব্যায়াম যেমন বাইরের অঙ্গ সুনিপুণ সৌন্দর্য ও বৃদ্ধির মাধ্যম, এটা তেমনি ভেতরের অঙ্গগুলো যেমন-হূদয়, প্লীহা, জঠর, ফুসফুস, মগজ, অন্ত্র, পাকস্থলী, মেরুদন্ডের হাড়, ঘাড়, বুক এবং দেহের সকল গ্লান্ড ইত্যাদি সুদৃঢ় করে ও উন্নত করে এবং দেহের সিডিউল এবং সৌন্দর্য রক্ষা করে। নামাজের প্রচলন যদি হতো তাহলে :কিছু রোগ এরূপও আছে যেগুলো থেকে নামাজ চালু করার দ্বারা রক্ষা পাওয়া যায়, কেননা নামাজ আদায়ের মাধ্যমে দেহে এসব রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
এর ধারাবাহিকতায় ডাক্তার হাসান গজনবীর এ বাক্যগুলো চিন্তার খোরাক জোগায়। তিনি লেখেন :
“In addition to saving us from the sins and elevating us to the hights of spirituality prayers are great help in maintaining our physical health. The keep our body active, help digestion and save us from nuscase and joint diseaes through regular balanced exercise. They help the circulation of blood and also the bad effect of cholesterol. Prayers a vital role in acting as preventive measure against heart attack, Paralyes. diabetes mellitus etc. Hearts patients should offer the five obligatory prayers regularly as they get the permission from their doctor to leave bad. (Islamic Medicine. P. 68).”

“আমাদেরকে পাপ থেকে রক্ষা করা এবং আধ্যাত্মিকতার উচ্চ শিখরে আরোহণ করানোর সাথে সালাত আমাদের দৈহিক স্বাস্থ্য রক্ষায় বড় ধরনের সাহায্য করে। এটি আমাদের দেহকে সক্রিয় রাখে, হজমে সাহায্য করে, আমাদেরকে জড়তা ও জোড়ার রোগ থেকে নিয়মিত সুষম ব্যায়ামের দ্বারা রক্ষা করে। এটি রক্ত পরিসঞ্চালনে এবং কলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। সালাত হার্ট এ্যাটাক, প্যারালাইসিস, ডায়াবেটিস মেলিটাস ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হার্টের রোগীদের প্রতিদিন বাধ্যতামূলক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা উচিত, যেমনিভাবে তারা তাদের ডাক্তারদের নিকট খারাপ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য অনুমতি লাভ করে থাকেন’ (প্রাগুক্ত)”
পশ্চিমারা আজ হরেক রকমের ব্যায়াম করছেন যাতে তাদের দেহের কলেস্টেরল গড়মাত্রা সীমাতিক্রম না করে। এছাড়াও এদের দেহ সব প্রভাবশীল পন্থায় কাজ করে। তারা এ সত্যকে স্বীকার করে নিয়েছেন যে, ইসলামী নামাজ যা কোনোরূপ ব্যায়াম নয় অথচ তা নানারূপ ব্যায়ামের রূপ পরিগ্রহ করে। তা স্বাস্থ্যসম্মতও বটে। যেমন জার্মানের প্রসিদ্ধ পত্রিকা ‘ডি হায়েফ’-এ প্রসিদ্ধ জার্মান মান্যবর ও প্রাচ্যবিদ জাওয়াকীম ডি জুলফ এ সত্যকে প্রকাশ করেছেন তার জবানীতে। তিনি লিখেছেন: যদি ইউরোপে ইসলামী নামাজের প্রচলন হতো তাহলে আমাদের দৈহিক ব্যায়ামের জন্য নতুন নতুন ব্যায়াম ও নড়াচড়া আবিষ্কার করার প্রয়োজন হতো না (আল মাসালিহুল আমলিয়াহ লিল আহকামিশ শরইয়াহ পৃ. ৪০৬)।

সর্বোত্তম পর্যায়ের চিকিত্সা :এক পাকিস্তানি ডাক্তার মাজেদ জামান উসমানী ইউরোপে ফিজিওথেরাপির ওপর উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণের জন্য গিয়েছেন। যখন সেখানে সম্পূর্ণ নামাজের ব্যায়াম পড়ালেন এবং বুঝালেন তখন তিনি এ ব্যায়াম দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে গেলেন যে, আমরা এতদিন পর্যন্ত নামাজকে এক ধর্মীয় আবশ্যক বলেই জানতাম এবং পড়তে থাকতাম, অথচ এখানে তো আশ্চর্য ও অজানা জিনিসের আবিষ্কার হয় যে, নামাজের মাধ্যমে বড় বড় রোগ নিরাময় হয়ে যায়। ডাক্তার সাহেব তাকে একটি তালিকা প্রদান করেন যা নামাজের মতো ব্যায়ামের মাধ্যমে নিরাময় হয়— ১. মানসিক রোগ (Mental Diseases) ২. স্নায়ুবিক রোগ (Nerve Diseases) ৩. মনস্তত্ত্ব রোগ (Psychic Diseases) ৪. অস্থিরতা, হতাশা ও দুশ্চিন্তা রোগ (Restlessness, Depression and Anxiety) ৫. হার্টের রোগ (Heart Diseases) ৬. জোড়ার রোগ (Arthritis) ৭. ইউরিক এসিড থেকে সৃষ্ট রোগ (Diseases due to Uric Acid) ৮. পাকস্থলীর আলসার (Stomach Ulcer) ৯. চিনি রোগ (Diabetes Mellitus) ১০. চোখ এবং গলা ইত্যাদির রোগ (Eye and E.N.T. Dieases). মনস্তাত্তিক রোগ নামাজের মধ্যে মনস্তাত্তিক রোগ যেমন- গুনাহ, ভয়, নীচুতা, হতাশা, অস্থিরতা, পেরেশানি ইত্যাদিরও চিকিত্সা রয়েছে। যার বর্ণনা পুস্তকের কলেবর দীর্ঘ হওয়ার ভয়ে বাদ দিতে হচ্ছে।
একই সঙ্গে নামাজ দ্বারা পূর্বোক্ত উপকারিতা ছাড়াও দৈহিক ও মেধাগত উপকারিতাও হয়। আজ ইসলামি ইবাদতের বৈজ্ঞানিক যুক্তিগুলো সামনে আসছে। নামাজের প্রত্যেকটি রুকন কোনো না কোনো চিকিত্সাগত ও মনস্তাত্তিক উপকারের বাহক। ব্যায়াম ও নামাজ :নামাজের রুকনগুলো এককভাবে ব্যাখ্যা করলে তার আলোকে দেখা যায় নামাজের প্রত্যেক রুকন আদায়ের মধ্যেই বিশেষ অঙ্গ ও জোড়ার আন্দোলন সৃষ্টি হয় এবং বিশেষ অঙ্গগুলোর ব্যায়াম হয়। শরীরতত্ত বিদ্যার (Physiology) একটি মূলনীতি এই যে, যখন মানুষ নড়াচড়ার ইচ্ছে করে তখন সংশ্লিষ্ট মস্তিষ্কের কেন্দ্র থেকে নড়াচড়া স্নায়ুর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অঙ্গে পৌঁছায় এবং অঙ্গগুলো স্থানভেদে সংবর্ধিত, সংকুচিত হয়ে উদ্দিষ্ট কাজ করে থাকে এবং যখন নামাজ আদায়ের শুরুতে বারবার নামাজের রুকনগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটে তখন এ আকার একটি ব্যায়ামের প্রকৃতি গ্রহণ করে যার দ্বারা অঙ্গ ও জোড়াগুলোর বর্ধন ও উন্নতি এবং শক্তি বৃদ্ধি পায়।
এভাবে নামাজের সব রুকন আদায়ের মাধ্যমে মানবের সব অঙ্গের ব্যায়াম হয়ে যায়। যার দ্বারা মানব দেহের সতেজতা ও শক্তি বহাল থাকে এবং দৈহিক কার্যাবলি প্রাকৃতিক মাপকাঠির ওপর চলতে থাকে। সামগ্রিক ইবাদত নামাজ একটি উত্তম ইসলামি ব্যায়াম, যা মানুষকে সর্বদা সতেজ রাখে। অলসতা ও অবসাদকে দেহের মধ্যে বাড়তে দেয় না কিন্তু অন্য কোনো ধর্মে এমন কোনো সামগ্রিক ইবাদত নেই যা আদায়ের মাধ্যমে মানুষের সব অঙ্গের নড়াচড়া ও শক্তি বৃদ্ধি পায়। এ বৈশিষ্ট্য শুধু নামাজের মধ্যেই রয়েছে যে এটা সমগ্র ইসলামের সামগ্রিক ব্যায়াম যার প্রভাব সমগ্র মানব অঙ্গের ওপর সমভাবে পড়ে এবং দেহের সব অঙ্গের নড়াচড়া ও শক্তি সৃষ্টি হয় এবং স্বাস্থ্য রক্ষিত থাকে (ইসলামি স্বাস্থ্য বিধি, পৃ-৩৬)।
কঠিন বস্তু সচল করা : নামাজ আত্মা ও দেহ উভয়ের জন্য ব্যায়াম-এ জন্য এর মধ্যে দাঁড়ানো, বসা, রুকু, সিজদা এগুলোর বিভিন্ন ধরনের নড়াচড়া হয়ে থাকে এবং নামাজী এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থার দিকে পরিবর্তিত হতে থাকে। নামাজে দেহের অধিকাংশ জোড়া নড়াচড়া করতে থাকে এবং এর সাথে বেশির ভাগ অদৃশ্য অঙ্গগুলো পাকস্থলী, অন্ত্র, শ্বাসযন্ত্র, এবং খাদ্যের অঙ্গগুলো এসবের গঠনে নড়াচড়া এবং পরিবর্তন আসে। অত:পর এ অবস্থায় কোনো কথা নিষেধকারী যে এ সব নড়াচড়ার দ্বারা কিছু অঙ্গ শক্তি অর্জন করবে এবং অপ্রয়োজনীয় আবশ্যিক জিনিসগুলো সচল না হবে? (তিব্বে নববী, পৃ.-৩৯৯)। (চলবে)

গ্রন্থনা- জাকির হোসাইন আজাদী
 

নামাযের ফযীলতে ২৫টি সুসংবাদ

নামাযের ফযীলতে ২৫টি সুসংবাদ

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুলল্লাহ।

সম্মানিত বন্ধুরা, আজ আমরা জানব কুরআনও সহীহ হাদীসের আলোকে নামাযের ফযীলত সম্পর্কে ২৫টি সুসংবাদ। বিষয়টি ইনশাআল্লাহ আমাদেরকে নামাযে আরও যত্নবান হওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। তাহলে আসুন আমরা বিষয়টি একটু মনোযোগ সহকারে পড়ি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে নামাযী হিসেবে কবুল করে সৌভাগ্যশালীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমীন।

  1. ছালাত সর্বোত্তম আমল: রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে প্রশ্ন করা হল কোন আমলটি সর্বোত্তম? তিনি বললেন, সময়মত ছালাত আদায় করা। (মুসলিম)

  2. ছালাত বান্দা এবং প্রভুর মাঝে সম্পর্কের মাধ্যম: রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কেউ যখন ছালাত আদায় করে, তখন সে তার পালনকর্তার সাথে গোপনে কথা বলে। (বুখারী)

  3. ছালাত দ্বীনের মূল খুঁটি: রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সবকিছুর মূল হচ্ছে ইসলাম। তার (ইসলামের) মূল স্তম্ভ হচ্ছে ছালাত এবং তার (ইসলামের) সর্বোচ্চ চুড়া হচ্ছে জিহাদ। (তিরমিযী)

  4. ছালাত হচ্ছে আলোকবর্তিকা: রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ছালাত হচ্ছে (কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য) নূর বা আলোকবর্তিকা। (মুসলিম, তিরমিযী)

  5. মুনাফেকী থেকে মুক্তি লাভের মাধ্যম হচ্ছে ছালাতঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মুনাফেকদের উপর ফজর ও এশা ছালাতের চাইতে অধিক ভারী কোন ছালাত নেই। তারা যদি জানত এ দু‘ছালাতে কত ছওয়াব রয়েছে, তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে উপস্থিত হত। (বুখারী ও মুসলিম)

  6. ছালাত জাহান্নাম থেকে নিরাপত্তার গ্যারান্টি: রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কখনই জাহান্নামে প্রবেশ করবে না এমন ব্যক্তি, যে সূর্যোদয়ের পূর্বে ছালাত আদায় করেছে এবং সূর্যাস্তের-র পূর্বে ছালাত আদায় করেছে। অর্থাৎ- ফজর ও আছর ছালাত। (মুসলিম)

  7. নিশ্চয় ছালাত মানুষকে অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখে: আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেন, اتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنْ الْكِتَابِ وَأَقِمْ الصَّلَاةَ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنْ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِকুরআনের যা আপনার কাছে ওহী করা হয়েছে তা পাঠ করুন এবং ছালাত প্রতিষ্ঠা করুন। নিশ্চয় ছালাত অশ্লীল ও গর্হিত বিষয় থেকে বিরত রাখে। (সূরা আনকাবূত- ৪৫)

  8. সকল কাজে সাহায্য লাভের মাধ্যম ছালাত: আল্লাহ্‌ বলেন, وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ তোমরা ছবর (ধৈর্য) এবং ছালাতের মাধ্যমে (আল্লাহ্‌র কাছে) সাহায্য প্রার্থনা কর। (সূরা বাক্বারা- ৪৫)

  9. একাকী ছালাত আদায় করার চেয়ে জামাতে আদায় করা অনেক উত্তম: রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, একাকী ছালাত আদায় করার চেয়ে জামাতের সাথে ছালাত আদায় করা পঁচিশ গুণ বেশী মর্যাদা সম্পন্ন। (বুখারী ও মুসলিম)

10. ফেরেশতারা মুছল্লীর জন্য মাগফেরাত ও রহমতের দুয়া করেন: রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কোন ব্যক্তি ছালাত আদায় করার পর যতক্ষণ স্বীয় জায়নামাজে বসে থাকে ততক্ষণ ওযু ভঙ্গ না হওয়া পর্যন্ত ফেরেশতারা তার জন্য দু‘আ করতে থাকে। বলে, হে আল্লাহ্‌ তাকে ক্ষমা কর, তাকে রহম কর। (বুখারী ও মুসলিম)

11. ছালাত গুনাহ্‌ মাফের মাধ্যম: রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি ছালাতের জন্য ওযু করবে এবং ওযুকে পরি পূর্ণরূপে করবে। তারপর ফরয ছালাত আদায় করার জন্য পথ চলবে; অতঃপর তা মানুষের সাথে বা জামাতে বা মসজিদে আদায় করবে, তাহলে আল্লাহ্‌ তার গুনাহ্‌ সমূহ ক্ষমা করে দিবেন। (মুসলিম)

12. ছালাতের মাধ্যমে শরীর থেকে গুনাহ‌গুলো বের হয়ে যায়: রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা কি মনে কর, তোমাদের কারো ঘরের সামনে যদি একটি নদী প্রবাহিত থাকে। এবং প্রতিদিন সে উহাতে পাঁচ বার গোসল করে, তবে তার শরীরে কোন ময়লা থাকবে কি? তাঁরা (সাহাবিগণ) বললেন: কোন ময়লাই বাকী থাকতে পারে না। তিনি বললেন: এরূপ উদাহরণ হল পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের ক্ষেত্রেও। এভাবে ছালাতের বিনিময়ে আল্লাহ্‌ নামাযীর যাবতীয় (ছোট) পাপগুলো মোচন করে দেন। (বুখারী ও মুসলিম)

13. ছালাতের জন্য মসজিদে গমন করলে এক পদে গুনাহ মোচন হয় অন্য পদে মর্যাদা উন্নীত হয়: রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি নিজ গৃহে ওযুর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করে, তারপর আল্লাহ্‌র কোন এক ঘরে (মসজিদে) যায় আল্লাহ্‌র কোন একটি ফরজ ছালাত আদায় করার জন্য, তবে তার পদক্ষেপগুলোর বিনিময়ে একটি পদে একটি গুনাহ মোচন করা হয় অন্য পদে একটি মর্যাদা উন্নীত হয়। (মুসলিম)

14. আগেভাগে ছালাতে আসার মর্যাদা: রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মানুষ যদি জানত আজান দেয়া এবং প্রথম কাতারে ছালাত আদায় করার প্রতিদান কি, তাহলে (কে আজান দেবে বা কে প্রথম কাতারে ছালাত আদায় করবে তা নির্ধারণ করার জন্য) তারা পরস্পর লটারি করতে বাধ্য হত। তারা যদি জানত আগেভাগে ছালাতে আসাতে কি প্রতিদান রয়েছে তবে, তারা প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ত। (বুখারী ও মুসলিম)

15. ছালাতের জন্য অপেক্ষাকারী ছালাতরতই থাকে: রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কোন ব্যক্তি ছালারতই থাকে যতক্ষণ ছালাত তাকে বাধা দিয়ে রাখে। শুধু ছালাতই তাকে নিজ গৃহে বা পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়া থেকে বিরত রাখে। (বুখারী ও মুসলিম)

16. ছালাতে আমীন বলার দ্বারা পূর্বের গুনাহ্‌ ক্ষমা হয়ে যায়: রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কোন ব্যক্তি যখন (সূরা ফাতিহা শেষে) ‘আমীন’ বলে। আর ফেরেশতারা আসমানে বলে ‘আমীন’। তাদের একজনের আমীন বলা অন্য জনের সাথে মিলে গেলে তার পূর্বের গুনাহ্‌ ক্ষমা হয়ে যায়। (বুখারী ও মুসলিম)

17. ছালাতের মাধ্যমে আল্লাহ্‌র নিরাপত্তা লাভ করা যায়: রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি সকালের (ফজর) ছালাত আদায় করে সে আল্লাহ্‌র জিম্মাদারিতে হয়ে যায়। ভেবে দেখ হে আদম সন্তান! আল্লাহ্‌ যেন তার জিম্মাদারিতে তোমার কাছে কোন কিছু চেয়ে না বসেন। (মুসলিম)

18. ছালাতের দ্বারা কিয়ামত দিবসে পরিপূর্ণ নূর লাভ করা যায়: রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যারা অন্ধকারে (অর্থাৎ- ফজরের ছালাত আদায় করার জন্য) মসজিদে গমন করে, তাদেরকে কিয়ামত দিবসে পরিপূর্ণ নূরের সুসংবাদ দিয়ে দাও। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী)

19. আছর ও ফজরের ছালাত আদায়কারীর জন্য জান্নাতের সুসংবাদ: রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি দুঠান্ডার সময়ের (আছর ও ফজর) ছালাত আদায় করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বুখারী ও মুসলিম)

20. পুলসিরাত পার হয়ে জান্নাতে যাওয়ার সুসংবাদ: রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, প্রত্যেক পরহেজগার ব্যক্তির গৃহ হচ্ছে মসজিদ। আর যে ব্যক্তির গৃহ হবে মসজিদ আল্লাহ্‌ তার জন্য করুণা ও দয়ার জিম্মাদার হয়ে যান এবং আরও জিম্মাদারি নেন পুলসিরাত পার হয়ে আল্লাহ্‌র সন’ষ্টি জান্নাতে যাওয়ার। (ত্ববরানী, শায়খ আলবানী হাদছীটিকে ছহীহ বলেছেন।)

21. ছালাত শয়তান থেকে নিরাপদ থাকার মাধ্যম: রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কোন গ্রামে যদি তিনজন লোক থাকে এবং তারা জামাতের সাথে ছালাত প্রতিষ্ঠা না করে তবে শয়তান তাদের উপর প্রাধান্য বিস্তার করে। সুতরাং তোমরা জামাত বদ্ধ থাক। কেননা দুল ছুট একক ছাগলকে নেকড়ে বাঘ খেয়ে ফেলে। (আহমাদ, আবু দাউদ, নাসাঈ, দ্র: ছহীহুল জামে হা/ ৫৭০১)

22. ছালাত আদায়কারীর জন্য ফেরেশতারা সাক্ষ্য দান ককরে:রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, রাতে একদল ফেরেশতা এবং দিনে একদল ফেরেশতা তোমাদের নিকট আআগমনকরে। তারা ফজর ছালাত এবং আছর ছালাতে পরস্পর মিলিত হয়। তারপর যেসকল ফেরেশতা রাতে তোমাদের নিকট আআগমনকরেছিল তারা চলে যায়, তখন আল্লাহ্‌ তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন- অথচ তিনি সর্বাধিক জানেন- আমার বান্দাদেরকে কি অবস্থায় ছেড়ে এসেছ? তারা বলে, তাদেরকে রেখে এসেছি এমন অবস্থায় যে তারা ছালাত আদায় করছে এবং তাদেরকে এমন অবস্থায় আমরা পেয়েছি যে তারা ছালাত আদায় করছে। অন্য বর্ণনায় আছে, আমরা যখন তাদের কাছে যাই তখন তারা ছালাতরত ছিল এবং যখন তাদেরকে ছেড়ে আসি তখনও তারা ছালাতরত ছিল। সুতরাং তাদেরকে হিসাবের দিন ক্ষমা করুন। (বুখারী ও মুসলিম, দ্র: ছহীহ্‌ তারগীব ও তারহীব হা/৪৬৩)

23. পূর্ণ রাত নফল ছালাত আদায় করার ছওয়াব: রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি এশা ছালাত জামাতের সাথে আদায় করবে, সে যেন অর্ধ রাত্রি নফল ছালাত আদায় করল, এবং যে ব্যক্তি ফজর ছালাত জামাতের সাথে আদায় করবে, সে যেন পূর্ণ রাত্রি নফল ছালাত আদায় করল। (মুসলিম)

24. ছালাতই কিয়ামত দিবসে আরশের নীচে ছায়া লাভের মাধ্যম: রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কিয়ামত দিবসে সাত ধরণের ব্যক্তিকে আরশের নীচে ছায়া দান করা হবে যে দিন আল্লাহ্‌র আরশের ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না- তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে এমন ব্যক্তি যার হৃদয় লটকানো থাকে মসজিদে। অর্থাৎ যখনই ছালাতের সময় হয় সে ছুটে যায় মসজিদের পানে। (বুখারী ও মুসলিম)

25. মুনাফেকী এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ: রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র জন্য চল্লিশ দিন (২০০ ওয়াক্ত) জামাতের সাথে ইমামের তাকবীরে তাহরীমার সাথে ছালাত আদায় করবে তার জন্য দু‘টি মুক্তি নামা লিখা হবে। ১) জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং ২) মুনাফেক্বী থেকে মুক্তি। (তিরমিযী, দ্র: ছহীহুল জামে হা/৬৩৬৫)

==============

ছালাতের ফযীলতে

মূল: ঈদ আল আনাযী

অনুবাদ: মুহাঃ আবদুল্লাহ্‌ আল্‌ কাফী দাঈ, জুবাইল দাওয়া এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সঊদী আরব। পো: বক্স নং ১৫৮০, জুবাইল- ৩১৯৫১

Wednesday, September 18, 2013

প্রশ্নঃ কোন মসজিদে কবর থাকলে সেখানে নামায আদায় করার হুকুম কি?

প্রশ্নঃ কোন মসজিদে কবর থাকলে সেখানে নামায আদায় করার হুকুম কি?


উত্তরঃ কবর সংশ্লিষ্ট মসজিদে নামায আদায় করা দু’ভাগে বিভক্তঃ
প্রথম প্রকারঃ প্রথমে কবর ছিল। পরবর্তীতে তাকে কেন্দ্র করে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ওয়াজিব হচ্ছে এই মসজিদ পরিত্যাগ করা; বরং মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা। যদি না করা হয় তবে মুসলিম শাসকের উপর আবশ্যক হচ্ছে উক্ত মসজিদ ধ্বংস করে ফেলা।
দ্বিতীয় প্রকারঃ প্রথমে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। পরে সেখানে কোন মৃতকে দাফন করা হয়েছে। তখন ওয়াজিব হচ্ছে, কবর খনন করে মৃত ব্যক্তি বা তার হাড়-হাড্ডি সেখান থেকে উত্তোলন করে, মুসলমানদের গোরস্থানে দাফন করা। এই মসজিদে শর্ত সাপেক্ষে ছালাত আদায় করা জায়েয। আর তা হচ্ছে, কবর যেন মসজিদের সম্মুখভাগে না হয়। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবরের দিকে ছালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন।
কেউ প্রশ্ন করতে পারে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কবর তো মসজিদের মধ্যে? এর জবাব কি?
এর জবাব হচ্ছে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর মৃত্যুর পূর্বেই মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। একথা সবার জানা যে, তাঁকে মসজিদের মধ্যে দাফন করা হয়নি; বরং মসজিদ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা স্থান, তাঁর নিজ গৃহে তাঁকে দাফন করা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে ৮৮ হিঃ সনে খলীফা ওয়ালিদ বিন আবদুল মালিক তার অধিনস্থ মদীনার আমীর ওমর বিন আবদুল আযীযকে পত্র মারফত নির্দেশ প্রদান করেন, মসজিদে নববী ভেঙ্গে পূণঃনির্মাণ করার সময় যেন উম্মুল মু’মেনীন তথা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর স্ত্রীদের গৃহগুলোকে মসজিদের আওতার মধ্যে নিয়ে আসা হয়। তখন ওমর বিন আবদুল আযীয মদীনার নেতৃস্থানীয় লোক এবং ফিক্বাহবিদদেরকে একত্রিত করে তাঁদের সামনে খলীফার পত্র পড়ে শোনান। বিষয়টি তাদের কাছে খুবই কঠিন মনে হয়। তাঁরা বললেন, কবর ও গৃহগুলোকে বর্তমান অবস্থাতেই রেখে দেয়া উচিত। উপদেশ গ্রহণ করার জন্য এটাই সর্বাধিক সঠিক উপায়। বর্ণিত আছে যে, সাঈদ বিন মুসাইয়্যেব আয়েশা (রাঃ)এর গৃহ তথা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কবর শরীফকে মসজিদের মধ্যে শামিল করার ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে বাধা প্রদান করেন। কেননা তিনি আশংকা করছিলেন যে, এই কবরকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হতে পারে। যা হাদীছের ভাষায় নিষিদ্ধ। বিষয়টি ওমর লিখে পাঠালেন খলীফা ওয়ালিদের কাছে। কিন্তু ওয়ালিদ তার নির্দেশই বাস্তবায়ন করার আদেশে অটল রইলেন। ফলে বাধ্য হয়ে ওমর খলীফার নির্দেশ মোতাবেক কবরকে মসজিদের মধ্যে শামিল করে ফেললেন।
অতএব আপনি দেখলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কবর মূলতঃ মসজিদের মধ্যে দেয়া হয়নি। আর কবরের উপর মসজিদও বানানো হয়নি। সুতরাং যারা মসজিদে দাফন করা বা কবরের উপর মসজিদ তৈরীর বৈধতার পক্ষে কথা বলে তাদের কোন দলীল নেই। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)থেকে বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত হয়েছে তিনি বলেন:
لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الْيَهُودِ وَالنَّصَارَى اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ
    “ইহুদী ও খৃষ্টানদের প্রতি আল্লাহর লা’নত (অভিসম্পাত), তারা তাদের নবীদের কবর সমূহকে মসজিদে রূপান্তরিত করেছে।”
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুমূর্ষু অবস্থায় ইহুদী খৃষ্টানদের কার্যকলাপ থেকে কঠিনভাবে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে উপরোক্ত বাণী পেশ করেন। উম্মে সালামা (রাঃ) হাবশায় হিজরত করে খৃষ্টানদের গীর্জা বা উপাসনালয়ে স্থাপিত বহু মূর্তী দেখেছিলেন। বিষয়টি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কাছে উল্লেখ করলে তিনি বলেন:
أُولَئِكَ قَوْمٌ إِذَا مَاتَ فِيهِمُ الْعَبْدُ الصَّالِحُ أَوِ الرَّجُلُ الصَّالِحُ بَنَوْا عَلَى قَبْرِهِ مَسْجِدًا وَصَوَّرُوا فِيهِ تِلْكَ الصُّوَرَ أُولَئِكَ شِرَارُ الْخَلْقِ عِنْدَ اللَّهِ
    “ওরা এমন জাতি, তাদের মধ্যে কোন নেক বান্দা বা সৎলোক মৃত্যু বরণ করলে তার কবরের উপর তারা মসজিদ তৈরী করত এবং ঐ মূর্তিগুলো স্থাপন করত। ওরা আল্লাহর কাছে সৃষ্টির মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট।”
আবদুল্লাহ্ বিন মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেন,
    “সর্বাধিক নিকৃষ্ট লোক হচ্ছে তারা, যাদের জীবদ্দশায় ক্বিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। আর যারা কবর সমূহকে মসজিদে রূপান্তরিত করেছে।” ইমাম আহমাদ উত্তম সনদে হাদীছটি বর্ণনা করেন।
অতএব মু’মিন কখনই ইহুদী-খৃষ্টানদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সন্তুষ্ট হবে না এবং সৃষ্টি কুলের মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট হবে না।
- আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমীন (রাহ.)

মুনাফিকগণ আছরের নামাজ দেরীতে আদায় করে

মুনাফিকগণ আছরের নামাজ দেরীতে আদায় করে

 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ওই হচ্ছে মুনাফিকের সালাত যে বসে বসে সূর্য কমলা রং ধারণ না করা পর্যন্ত অপেক্ষা করে এবং তা শয়তানের (সিজদার মুশরিক) দুই শিংয়ের মাঝামাঝি এলে সে গিয়ে দ্রুত গতিতে চার রাকাত সালাত আদায় করে। যার মধ্যে সে আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে থাকে।”

- মুসলিম
ব্যাখ্যা: এ হাদীস দ্বারা মুনাফিক এবং মুমিনের নামাজের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা হয়েছে। মুনাফিকগণ সময় মতো নামাজ পড়ে না। রুকু সিজদা ঠিকমতো আদায় করে না। তার অন্তরও আল্লাহর প্রতি নিবিষ্ট থাকে না। সাধারণভাবে সব নামাজই গুরুত্বপূর্ণ। তন্মধ্যে ফরজ ও আসরের নামাজের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কারণ আসরের সময় সাধারণত: কাজ করাবার খেলা ধূলা ও হাট বাজার ক্রয় বিক্রয়ের সময়। এ সময় মানুষ উপরোক্ত কাজে ব্যস্ত থাকে এবং রাত হবার পূর্বেই কাজকর্ম সেরে বাড়ি ফিরতে চায়। এ সময় মু’মিনরে অন্তর যদি নামাজ সম্পর্কে সতর্ক না থাকে তবে আসরের নামাজ কাজা হয়ে যেতে পারে।
ফজরের নামাজ এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ যে, এ সময় নিদ্রা ও আয়েশের সময় এ কথা সকলেরই জানা আছে যে ভোরের সময়ের ঘুম অত্যন্ত গভীর ও আরমদায়ক। মানুষের অন্তরে যদি ঈমান সক্রিয় ও সজাগ না থাকে তাহলে এ সময়ের প্রিয় ঘুম ত্যাগ করে আল্লাহর দরবারে হাজিরা দিতে পারে না।

 Source: http://raheamol.com

বাংলা ইসলামী নাটক - নামাজ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্টা, জান্নাতের সিড়ি।

Tuesday, September 17, 2013

তাহাজ্জুতের নামাজ- আবশ্যিক থেকে ঐচ্ছিক।

তাহাজ্জুতের নামাজ- আবশ্যিক থেকে ঐচ্ছিক। 

 

তাহাজ্জুদ (Tahajjud) রাতের নামাজ (Salatul Layl)। অন্যান্য (ফজর, যোহর, আছর, মাগরিব ও এশা) নামাজের মত এ নামাজের কোন রা'কা সুনির্দিষ্ট নেই, নেই কোন সর্বোচ্চ লিমিট। It would be fulfilled even if one prayed just one rak`ah of  after `Isha'; however, it is traditionally prayed with at least two rak'at which is known as shif'a followed by witr as this is what Muhammad did. 

তবে এ বিষয়ে বুখারীর এই হাদিসটি অনুসরণ করা যেতে পারে- "Salatul Layl is offered as two rak'at followed by two rak'at and (so on) and if anyone is afraid of the approaching dawn (Fajr prayer) he should pray one rak'at and this will be a Witr for all the rak'at which he has prayed before." - বুখারী, ৫৩৯।

যাইহোক, তাহাজ্জুদ এশার নামাজের পর- রাতের প্রথম ভাগে, মধ্যভাগে বা শেষ রাতে পড়া হয়। এ নামাজ এখন আর ফরজ বা আবশ্যিক নয়।

কোরআন অবতরণের প্রথম দিকে এই আয়াত দ্বারা তাহাজ্জুতের নামাজ ফরজ করা হয়েছিল- "হে বস্ত্রাবৃত, রাত্রিতে দন্ডায়মান হও কিছু অংশ বাদ দিয়ে; অর্ধরাত্রি অথবা তদপেক্ষা কিছূ কম অথবা তদপেক্ষা বেশী এবং কোরআন আবৃত্তি কর সুবিন্যস্তভাবে ও স্পষ্টভাবে। আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি গুরুত্বপূর্ণ বাণী। নিশ্চয় এবাদতের জন্যে রাত্রিতে উঠা প্রবৃত্তি দলনে সহায়ক এবং স্পষ্ট উচ্চারণের অনুকূল। নিশ্চয় দিবাভাগে রয়েছে তোমার দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা। তুমি তোমার পালনকর্তার নাম স্মরণ কর এবং একাগ্রচিত্তে তাতে মগ্ন হও।" -(৭৫:১-৮)

উপরের আয়াতসমূহে দেখা যাচ্ছে তাহাজ্জুত রাত্রির অধিকাংশ সময় ধরে পড়ার নির্দেশ রয়েছে। মুহম্মদ (Muhammad) ও তার শিষ্যদের সকলেই তা পালন করতে লাগলেন। ফলে অতি অল্পসয়য়েই তাদের পদযুগল ফুলে গেল। তাছাড়া তখনকার যুগে ঘড়ির প্রচলন না থাকায় কতটা সময় ধরে নামাজ আদায় করা হয়েছে এ সম্পর্কে তাদের সম্যক ধারণা থাকত না। ফলে প্রায় সারা রাত্রিই তারা নামাজে অতিবাহিত করে ফেলতেন। তাদের এই কষ্ট ও শ্রম আল্লাহর অগোচরে ছিল না। কিন্তু তাঁর জ্ঞানে পূর্ব থেকেই নির্ধারিত ছিল যে, এই পরিশ্রম ও মেহনতী এবাদত ক্ষণস্থায়ী হবে, আর যাতে এর কারণে তারা পরিশ্রম ও মেহনতে অভ্যস্ত হয়ে যান। 

রাতের এই পরিশ্রম দেখে পৌত্তলিক কুরাইশগণ মুসলমানদেরকে বিদ্রুপ করতে লাগল। তারা বলল- ‘তোমাদের প্রতি কোরআন তো নয়, সাক্ষাৎ বিপদ নাযিল হয়েছে। দিনেও শান্তি নেই, রাতেও আরাম নেই।’
আর দারুণ নাদওয়ার সদস্য এবং একজন বিশিষ্ট কুরাইশ ব্যবসায়ী নাজার ইবনে হারেছ (Nazar ibn Harith ) অদ্ভূত এক কাজ করে বসলেন। তিনি পারস্য থেকে এক সুন্দরী বাঁদী ক্রয় করে এনে তাকে কোরআন শ্রবণ এবং ইসলাম থেকে মানুষকে ফেরানোর কাজে নিয়োগ করলেন। তিনি লোকদেরকে ডেকে ডেকে বলতে লাগলেন, ‘মুহম্মদ তোমাদেরকে কোরআন শুনিয়ে নামাজ কায়েম করতে, রোজা রাখতে এবং ধর্মের জন্যে প্রাণ বিসর্জনের কথা বলেন। এতে কষ্টই কষ্ট। এস, এই সুন্দরী নারীর কন্ঠে গান শুন ও উল্লাস কর।’
তখন এই আয়াত নাযিল হল- "তোমাকে ক্লেশ দেবার জন্যে আমি কোরআন নাযিল করিনি। কিন্তু তাদেরই উপদেশের জন্যে, যারা ভয় করে।" -(২০:২-৩) 

অবশেষে একবৎসর পর যখন আল্লাহর অভীষ্ট ইচ্ছে পূর্ণ হল, তখন এই আয়াত দ্বারা নামাজের দৈর্ঘ্য কমিয়ে দেয়া হল। "তোমার পালনকর্তা জানেন, তুমি এবাদতের জন্যে দন্ডায়মান হও রাত্রির প্রায় দুই তৃতীয়াংশ, অর্ধাংশ ও তৃতীয়াংশ এবং তোমার সঙ্গীদের একটি দলও দন্ডায়মান হয়। আল্লাহ দিবা ও রাত্রির পরিমাপ করেন। তিনি জানেন তোমরা এর পূর্ণ হিসাব রাখতে পার না। অতএব তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাপরায়ণ হয়েছেন। কাজেই কোরআনের যতটুকু তোমাদের জন্যে সহজ, ততটুকু আবৃত্তি কর।
তিনি জানেন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ্য হবে, কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে দেশ-বিদেশে যাবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে জেহাদে লিপ্ত হবে। কাজেই কোরআনের যতটুকু তোমাদের জন্যে সহজ, ততটুকু আবৃত্তি কর। 
তোমরা নামাজ কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। তোমরা নিজেদের জন্যে যা কিছু অগ্রে পাঠাবে, তা আল্লাহর কাছে উত্তম আকারে এবং পুরস্কার হিসেবে বর্ধিতরূপে পাবে। তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থণা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।" -(৭৫:২০)

এরপর মেরাজের মাধ্যমে মুহম্মদকে সরাসরি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এর বিধান দেয়াতে আটোমেটিক তাহাজ্জুতের নামাজ আর আবশ্যিক রইল না। তবে আমাদের নবী মুহম্মদ নিয়মিতই এ নামাজ পড়তেন এবং সাহাবীদেরও পড়তে উৎসাহ দিতেন। কারণ এ নামাজের ফজিলত অনেক,- has many rewards and benefits, and a way to purify the soul, enabling it to approach the Realm of God.
কথিত আছে ইয়াকু্বের পুত্ররা তাদের অতীত কৃতকর্মের কথা স্মরণ করে অনুতপ্ত হয়ে অবনত মস্তকে পিতাকে বলেছিল, ‘হে আমাদের পিতা! নিশ্চয়ই আমরা অপরাধী। আমাদের পাপমুক্তির জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর।’
উত্তরে ইয়াকুব বলেছিলেন, ‘...আমি অবশ্যই আমার প্রতিপালকের কাছে তোমাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করব। তিনি ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু।’

সন্তানদের ক্ষমার জন্যে ইয়াকুব তৎক্ষণাৎ দোয়া করার পরিবর্তে দোয়া করার ওয়াদা করেছিলেন। তিনি তৎক্ষণাৎ ওয়াদা করেননি এই কারণে যে, তিনি বিশেষ গুরুত্ব সহকারে শেষরাত্রে দোয়া করতে চেয়েছিলেন। কেননা তিনি জানতেন ঐ সময়ে দোয়া কবুল হয়। আল্লাহ রাত্রির শেষ তৃতীয়াংশে নিকটতম আকাশে ঘোষণা করেন- ‘কেউ আছে কি, যে দোয়া করবে- আমি কবুল করব? কেউ আছে কি, যে ক্ষমা প্রার্থণা করবে- আমি ক্ষমা করব?’

তবে এখন তাহাজ্জুদ সাধারণ মুসলিমদের জন্যে আবশ্যিক না হলেও-এটা ঠিক য়ে, কোরআনে মুহম্মদের উপর সবসময়ই এটা পড়ার নির্দেশ ছিল-
"And during a part of the night, pray Tahajjud beyond what is incumbent on you; maybe your Lord will raise you to a position of great glory." -আল ইসরা, ১৭:৭৯।

উপরের এই আদেশ মুহম্মদের জন্যেই প্রযোজ্য সকল মুসলমানদের জন্যে নয় এটা ঠিক, কিন্তু যেহেতু আদর্শ মুসলিম হিসেবে মুহম্মদকে অনুসরণের নির্দেশ কোরআন প্রদান করেছে তাই ঐ নামাজটি সকল মুসলিমদের জন্যে আবশ্যিক হয়ে যায় বটে (This order, although it was specifically directed to Muhammad, also refers to all Muslims, since Muhammad is to be the perfect example and guide for them in all matters).
Moreover, performing Tahajjud prayers regularly qualifies one as one of the righteous and helps one earn God's bounty and mercy. In praising those who perform the late night prayers, God says what means: "And they who pass the night prostrating themselves before their Lord and standing."আল ফুরকান, ২৫:৬৪।
নামাজের পূর্বে শরীরকে পবিত্র করা অত্যাবশ্যক। কেননা নামাজের মধ্যে মানুষ নিজেকে মহান আল্লাহর সম্মুখে হাজির করে। সুতরাং পবিত্র সেই সত্ত্বার সম্মুখে নিজেকেও পবিত্র করে নিয়ে হাজির হতে হবে। শরীরকে পবিত্র করা তথা ওজু করার নিয়ম পদ্ধতি অবশ্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এর বিধান চালু হবার হওয়ার পরপরই নাযিল হয়নি। এটা নাযিল হয়েছিল অনেক পরে-মদিনাতে হিযরতের পর। আয়াতটি এই- 
"যখন তোমরা নামাজের জন্যে ওঠ, তখন স্বীয় মুখমন্ডল ও হস্তসমূহ কনুই পর্যন্ত ধৌত কর এবং পদযুগল গিঁটসহ। যদি তোমরা অপবিত্র হও, তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও এবং যদি তোমরা রুগ্ন হও অথবা প্রবাসে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রস্রাব পায়খানা সেরে আসে অথবা তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর, অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও- অর্থাৎ স্বীয় মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।" -(৫:৬)

মেরাজ (Mi'raj) এর মাধ্যমে মুহম্মদকে দৈনিক 'পাঁচ ওয়াক্ত' নামাজের বিধান দেয়া হয়েছিল যদিও এই সংখ্যার ব্যাপারে সরাসরি কোরআনে কোন আয়াত নেই। অনেকে নামাজ সম্পর্কিত কোরআনের বিভিন্ন আয়াত বিশ্লেষণ করে অহেতুক পাঁচ ওয়াক্তের ব্যাপারটা প্রমান করার চেষ্টা করেন। তার কোন প্রয়োজন আছে কি? যাহোক প্রসঙ্গে ফিরি, মুহম্মদ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিধান নিয়ে এলে মুসলমানগণ তা পালন করা শুরু করল।এদিকে নামাজের আহকাম ও আরকান সমূহ দেখে কুরাইশগণ অবাকই হল। কারণ এটা ছিল অভূতপূর্ব। তবে সাধারণ আরবরা কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করলেও আবু জেহেল করে বসলেন। তিনি মুহম্মদকে নামাজ পড়তে নিষেধ করলেন এবং হুমকিও দিলেন যে- ‘ভবিষ্যতে নামাজ পড়লে ও সিজদা করলে আমি তোমার ঘাড় পদতলে পিষ্ট করে দেব।’ 

এর জবাবে এই আয়াতসমূহ অবতীর্ণ হয়- "সত্যি সত্যি মানুষ সীমালঙ্ঘন করে এ কারণে যে, সে নিজেকে অভাবমুক্ত মনে করে। নিশ্চয় তোমার পালনকর্তার দিকে প্রত্যাবর্তণ হবে। তুমি কি তাকে দেখেছ যে নিষেধ করে এক বান্দাকে যখন সে নামাজ পড়ে? তুমি কি দেখেছ যদি সে সৎপথে থাকে অথবা আল্লাহ ভীতি শিক্ষা দেয়? তুমি কি দেখেছ, যদি সে মিথ্যারোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়? সে কি জানে না যে, আল্লাহ দেখেন? কখনই নয় যদি সে বিরত না হয়, তবে আমি মস্তকের সামনের কেশগুচ্ছ ধরে হেঁচড়াবই- মিথ্যাচারী, পাপীর কেশগুচ্ছ। অতএব সে তার সভাষদদের আহবান করুক। আমিও আহবান করব জাহান্নামের প্রহরীদেরকে কখনই নয়, তুমি তার আনুগত্য করবে না। তুমি সিজদা কর ও আমার নৈকট্য অর্জণ কর।" -(৯৬:৬-১৯)

আবু জেহেল অবশ্য জাহান্নামের প্রহরীদেরকে পাত্তা দেননি। তিনি যখন জানতে পারলেন সেখানকার প্রহরী উনিশজন ("..(জাহান্নাম) এর উপর নিয়োজিত রয়েছে উনিশ জন ফেরেস্তা।"-৭৪:৩০) তখন তিনি কুরাইশদেরকে বলেছিলেন-‘মুহম্মদের সহচর তো মাত্র উনিশজন। অতএব, তার সম্পর্কে তোমাদের চিন্তা করার দরকার নেই।’
আর জনৈক নগন্য কুরাইশ বলেছিল, ‘হে কুরাইশ গোত্র! কোন চিন্তা নেই। এই উনিশ জনের জন্যে আমি একাই যথেষ্ট, আমি আমার ডান বাহু দ্বারা দশজনকে এবং বাম বাহু দ্বারা নয়জনকে দূর করে দিয়ে উনিশের কিচ্ছা চুকিয়ে দেব।’

এরই পরিপ্রেক্ষিতে এই আয়াত নাযিল হয়- "আমি জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক ফেরেস্তাই রেখেছি। আমি অবিশ্বাসীদের পরীক্ষা করার জন্যেই এ সংখ্যা করেছি- যাতে কিতাবীরা দৃঢ় বিশ্বাসী হয়, মুমিনদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং কিতাবীরা ও মুমিনরা সন্দেহ পোষণ না করে এবং যাতে যাদের অন্তরে রোগ আছে, তারা এবং অবিশ্বাসীরা বলে যে, আল্লাহ এর দ্বারা কি বোঝাতে চেয়েছেন? এমনিভাবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছে পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছে সৎপথে চালান। তোমার পালনকর্তার বাহিনী সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জানেন। এটা তো মানুষের জন্যে উপদেশ বৈ নয়।" -(৭৪:৩১)

যাইহোক, পরবর্তীতে সাধারণ আরবরাও নামাজরত মুসলিমদের উত্যক্তে অংশগ্রহণ করেছিল। তারা মুহম্মদকে কা'বাতে নামাজ পড়া বন্ধ করে দিয়েছিল। অত:পর কোথাও তাকে বা অন্যকোন মুসলিমকে নামাজে রত অবস্থায় দেখতে পেলে তারা তাদের প্রতি ময়লা ও নোংরা জিনিষপত্র নিক্ষেপ করত, সিজদায় গেলে পিঠের উপর উটের নাড়ি-ভূড়ি চাপিয়ে দিত।

সমাপ্ত।

 Source: http://pytheya.blogspot.com